Mamata Banerjee: কন্যাশ্রী প্রক্লপের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিল মুখ্যমন্ত্রী,ভোটের বছরে ১ কোটি টার্গেট

70

ডিজিটাল ডেস্ক ১৪ অগাস্টঃ কন্যাশ্রী দ্বাদশ বর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়েও বাংলা ভাষার পক্ষে সওয়াল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলিপুর ধনধান্য স্টেডিয়ামে দর্শকের আসনে বসে থাকা ছাত্রীদের উদ্দেশে বললেন, সব ভাষাই শিখতে হবে। তা জীবন এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কিন্তু বাংলা ভাষা, নিজের মাতৃভাষাকে ভুললে চলবে না। তিনি জানালেন ৬২ টি দেশের ৫৫২ টি প্রকল্পের মধ্যে প্রথম স্থানে কন্যাশ্রী। এর উপকার পেয়েছে ৯৩ লক্ষ পড়ুয়া। মঞ্চ থেকে নিজের কলেজে ভর্তির সময়ের সমস্যার কথা তুলে ধরলেন তিনি। এর পাশাপাশি আগামী বছরে এই সংখ্যাকে ১ কোটিতে নিয়ে যেতে চান তিনি। মমতা জানান,আগামী বছর ১ কোটির লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করে গেলে কন্যাশ্রীর জন্য ‘স্পেশাল সেলিব্রেশন’ হবে(Mamata Banerjee)।

বৃহস্পতিবার আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন হয়। সেখানে কন্যাশ্রী প্রকল্পের পাশাপাশি ছাত্রীদের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য সবুজসাথী, তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন মমতা। সবুজসাথী চালু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর জন্য সরকারের খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা বলেন, “খরচটা যেখান থেকেই হোক জোগাড় করি। সংসার যারা চালায়, তারা খরচাটাও জোগাড় করে অ্যাডজাস্ট করে নেয়।” কন্যাশ্রীতে আগামী বছরের জন্য ১ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে মমতা জানান, এই প্রকল্পের জন্য সরকার ইতিমধ্যে ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে।

আগামী বছর নির্ধারিত সময় ভোট হলে মে-জুন মাসের মধ্যে নতুন সরকারের শপথগ্রহণ হয়ে যাওয়ার কথা। কন্যাশ্রী দিবস পালিত হয় ১৪ অগস্ট। ফলে মমতা বৃহস্পতিবার যে ‘স্পেশ্যাল সেলিব্রেশন’-এর কথা বলেছেন, তা ভোটের পরে হবে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে মমতা ভোটের পরের ‘স্পেশাল সেলিব্রেশন’-এর যে আগাম ঘোষণা করলেন, তা রাজনৈতিক ভাবেও অর্থবহ বলে অভিমত অনেকের। বোঝাতে চাইলেন, ২০২৬ সালে তিনিই ফের ক্ষমতায় ফিরছেন।

আজ কন্যাশ্রী দিবস। ২০১৩ সালের ১৪ আগষ্ট উদ্বোধন হয়েছিল এই প্রকল্পের। আজ ১২ বছর পূর্তিতে ধনধান্য স্টেডিয়ামে বিশেষ অনুষ্ঠানে শামিল হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শশী পাঁজা-সহ অন্যান্যরা। সেখানে উপস্থিত ছিল বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা। এদিন মঞ্চ থেকে কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর মতো প্রকল্পগুলোর সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। জানান, বিশ্বের ৫৫২ প্রকল্পের মধ্যে শীর্ষে কন্যাশ্রী প্রকল্প। এই প্রকল্পের জেরেই স্কুলছুট কমেছে বলে এদিন জানালেন তিনি। সবুজসাথী প্রকল্পে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ সাইকেল দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। চলতি মাসে ফের সাইকেল দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন। এরপরই অভিভাবকদের কাছে তিনি আর্জি জানান, যেন মেয়েদের ছোটবেলায় বিয়ে না দেওয়া হয়। পরিবর্তে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। এদিন মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আবারও ফিরে যান নিজের ছেলেবেলায়। কলেজে ভর্তি হতে গলার হার বিক্রি করতে হয়েছিল বলে জানান তিনি। বলেন, “আমি যে কষ্ট পেয়েছি, ছোটরা যেন তা না পায়।”

কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ড্রপআউট হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে । উচ্চমাধ্যমিকে একসময় ড্রপআউট ছিল 15.42 শতাংশ, যা কমে হয়েছে 3.17 শতাংশ । মাধ্যমিকে 16.32 শতাংশ থেকে নেমে এসেছে 2.9 শতাংশে । বর্তমানে 93 লক্ষ ছাত্রী কন্যাশ্রীর আওতায় এবং আগামী বছর তা এক কোটিতে পৌঁছবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি । এ পর্যন্ত প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় 17 হাজার কোটি টাকা ।

মেয়েদের দ্রুত বিয়ে না-দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে এবং আত্মনির্ভর হতে অভিভাবকদের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী । সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল বিতরণ এবং গবেষণার জন্য ইউজিসি অনুদান বন্ধ হওয়ায় রাজ্য সরকারের অর্থায়নের কথাও তিনি উল্লেখ করেন ।

প্রসঙ্গত, এ বছর কন্যাশ্রী প্রকল্প 12 বছরে পা দিল । সোশাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আমাদের সকলের গর্বের কন্যাশ্রী প্রকল্প আজ 12 বছরে পা দিল । নারীর ক্ষমতায়নে এত কম সময়ে এত বড় প্রভাব অন্য কোনও সরকারি প্রকল্প ফেলতে পারেনি ।” ইউনেস্কো স্বীকৃত এবং রাষ্ট্রসংঘ পুরস্কারপ্রাপ্ত এই প্রকল্পে এতদিনে রাজ্যের 93 লক্ষাধিক ছাত্রী উপকৃত হয়েছে, যাদের হাতে পৌঁছেছে প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার কোটি টাকা । আমি সবসময় মনে করি, যে সমাজে মেয়েরা ভালো থাকে না, সেই সমাজ কখনো ভালো থাকতে পারে না। সমাজের উন্নয়নের জন্য দরকার মেয়েদের ক্ষমতায়ন।”