Mamata Banerjee Jobless Teachers PC : সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাও বাধ্যতামূলক, চাকরিহারাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা

14

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৭ মে : আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি বিকেলে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “চাকরিহারা শিক্ষক ভাইবোনদের জন্য আজ বিকেল ৫টায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে, নবান্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক সম্মেলন (Mamata Banerjee Jobless Teachers PC)।”

সাংবাদিক বৈঠকের সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘ভুল বার্তা যাতে না যায়, তাই সকলকে আইন মেনে চলতে হবে। রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল, এবং আমি জানিয়েছি যাতে সকলেই চাকরি পান এবং কারও চাকরি না যায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। যদি সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগের অনুমতি দেয়, তবে সেই সিদ্ধান্ত মেনে চলা হবে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া চলবে।’’

মমতা জানান, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট তার আগের নির্দেশে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। দুটি শ্রেণি রয়েছে—শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। আমাদের লক্ষ্য ছিল যাতে চাকরিহারা সবাই তাদের চাকরি ফিরে পায়। তবে, অনেকেই পৃথকভাবে আদালতে গেছেন, এবং কিছু ক্ষেত্রে আদালত থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। যেকোনো ব্যক্তি আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন, এটি তাদের অধিকার। তবে, রাজ্য যখন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সকলের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হয়।’’ মমতা বলেন, বিষয়টি সংবেদনশীল। সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ, আমাদের বক্তব্য ভুল ভাবে দেখাবেন না। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন ‘‘আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, কারণ কারও চাকরি কেড়ে নিতে চাই না। যেহেতু রিভিউ হয়নি এবং পিটিশন এখনো বিচারাধীন, তাছাড়া কোর্টেও গরমের ছুটি চলছে, তাই আমাদের হাতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে, দুইটি প্রক্রিয়া একসঙ্গে চালু থাকবে—সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং যদি রিভিউ পিটিশনের ফল ইতিবাচক হয়, তবে তা গ্রহণ করা হবে।’’

তিন যোগ করেন ‘‘রিভিউয়ের সম্ভাবনা সবসময় বিদ্যমান। যতক্ষণ না রিভিউ সম্পন্ন হয়, ততক্ষণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ থাকবে ১৬ জুন পর্যন্ত।’’ মমতা জানান যে, যদি রিভিউ না হয়, তবে কাউন্সেলিং অনুষ্ঠিত হবে ২০ নভেম্বর। তিনি স্পষ্ট করেন, ‘‘আমরা বলছি না, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’’ লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউসহ সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, যদি রিভিউতে কোনও পরিবর্তন না আসে। বর্তমানে ২৪,২০৩টি পদ শূন্য রয়েছে, এবং হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সেই পদগুলিতে নিয়োগ করা হবে। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছে। ১১,৫১৭ অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি হয়েছে নবম-দশমের জন্য। একাদশ-দ্বাদশের জন্য ৬,৯১২ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। গ্রুপ-সির জন্য অতিরিক্ত ৫৭১টি শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে, আর গ্রুপ-ডির জন্য বাড়ানো হচ্ছে আরও ১,০০০ পদ। মোট শূন্যপদের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪৪,২০৩। নবম-দশম পর্যায়ের চাকরিহারাদের জন্য ২৩,২১২টি পদ, একাদশ-দ্বাদশের জন্য ১২,৫১৪টি পদ, গ্রুপ-সির জন্য ২,৯৮৯টি পদ এবং গ্রুপ-ডির জন্য ৫,৪৮৮টি পদ নির্ধারিত হয়েছে। যাঁরা আগে চাকরি করেছেন কিন্তু বয়সসীমা পেরিয়ে গেছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। বয়সের কারণে কেউ আটকাবে না—চাকরিহারারা বয়স পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। পাশাপাশি, যাঁরা ইতিমধ্যেই কাজ করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হবে।

মমতা জানিয়েছেন যে যাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে এবং যাঁরা চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাঁদের জন্য অন্য বিভাগে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, শিক্ষা বিভাগে কর্মী প্রয়োজন, কারণ সেখানে ঘর পরিষ্কার ও ঘণ্টা বাজানোর জন্য পর্যাপ্ত লোক নেই। ফলে, অতিরিক্ত গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। তাঁরা শিক্ষা বিভাগে আবেদন করতে পারবেন, তবে এই বিষয়ে পৃথকভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, নতুন পদ তৈরি করে তাঁদের নিয়োগ করা সম্ভব হবে। গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি সংক্রান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া পৃথকভাবে পরিচালিত হবে।

মমতা বলেন, ‘‘রিভিউ প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। শুধু বললেই হবে না, পরীক্ষা না দিলে চাকরির সুযোগ থাকবে না। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত নয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। সরকার আদালতে গিয়ে সিদ্ধান্ত বাতিল করেনি, কারণ এটি কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ নয়। কিছু স্বার্থপর ব্যক্তি এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন, অথচ এখন তাঁরা ফের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই সকলকে বলব, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী অপশন এক ও অপশন দুই—দু’টিই যথাযথভাবে কাজে লাগান। রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে বিচার না পেলে, পরীক্ষা না দিলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে ‘‘যাঁরা স্কুলে যাচ্ছেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবে যেতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের বেতন মিলবে। যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করে নিজেদের অবস্থানে ফিরে আসার জন্য সচেতন থাকুন। সুযোগ আসবে, সেটির যথাযথ সদ্ব্যবহার করুন। তবে, কোর্টের নির্দেশ অনুসরণ না করলে ২৬ হাজার শিক্ষক সমস্যায় পড়তে পারেন।’’

মমতা বলেন, ‘‘আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করব। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যাঁরা ৪০ বছর পার করেছেন, তাঁদের জন্য বয়সসীমায় ছাড় দেওয়া হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, তবে দয়া করে ভুল ধারণা সৃষ্টি করবেন না। আপনাদের আগে জানানো হবে, তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সবাই যাতে সঠিকভাবে জানতে পারেন, তাই আগেভাগেই এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব সচেতনতার মাধ্যমে চাকরি রক্ষার চেষ্টা করুন।’’