ডিজিটাল ডেস্ক, ২৮ জুলাই : বাংলায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিউ (SIR) বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনের মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে লক্ষ লক্ষ নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা যখন দেখা দিয়েছে, ঠিক তখনই বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee On BLO)। সোমবার বোলপুরের জনসভা থেকে তিনি স্পষ্ট জানান, বিএলও-রা রাজ্য সরকারের কর্মচারী। ফলে তাঁদের দায়িত্ব, যেন ভোটার তালিকা থেকে কোনও নাগরিকের নাম অযথা বাদ না যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন তো ভোট মিটে গেলে চলে যাবে। কিন্তু এই রাজ্যে সরকার থাকবে আমাদেরই। তাই প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মানুষের পাশে থাকতে হবে।” তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝাতে চাইলেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়ায় কোনওরকম পক্ষপাত বা অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না।
উল্লেখযোগ্যভাবে, যদিও পশ্চিমবঙ্গে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিউ (SIR) বা নিবিড় সংশোধনের প্রক্রিয়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি, তবুও বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। কয়েকজন BLO-কে দিল্লিতে পাঠিয়ে ট্রেনিং করানো হয়েছে, এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও চলছে তাঁদের প্রশিক্ষণ। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন BLO-দের ভাতা একধাক্কায় দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ সংশোধনী ড্রাইভের সময় অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই সোমবার বোলপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা শাসকদের কড়া ভাষায় সতর্ক করেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ১ হাজার কর্মীকে দিল্লি পাঠানো হয়েছে, অথচ আমি কিছুই জানি না। জেলা শাসকরা মুখ্যসচিব বা আমায় না জানিয়েই পাঠিয়ে দিয়েছেন।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান, রাজ্যের এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় না রেখে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানা ঠিক নয়।
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেন, “আমার অনুরোধ থাকবে— ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় দেখে নেবেন, যেন কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ না পড়ে। কেউ যদি চার দিনের জন্য কোথাও চলে যায়, তার নাম কি আপনি বাদ দিয়ে দেবেন? আগে যাচাই করুন, সত্যিই সে ব্যক্তি আছে কিনা।” মমতা আরও বলেন, “ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে ফলপ্রকাশ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কাজ চালাবে। তার বাইরে তাদের আর কোনও অধিকার নেই। আর আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনারা রাজ্য সরকারের কর্মচারী। কোনও সাধারণ মানুষকে যেন অকারণে হয়রানি না করা হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আজকে এই বিষয়ে মামলার শুনানি রয়েছে, তাই আমি বিস্তারিত কিছু বলছি না। তবে এটুকু বলছি, দেখবেন— কাউকে অহেতুক হেনস্থা করা যেন না হয়।”
বর্তমানে বিহারে বিজেপি ও তাদের জোটের সরকার থাকায় সেখানে এসআইআর বা ভোটার তালিকা সংশোধনে প্রশাসনিকভাবে কোনও সমস্যা হচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের। তবে তৃণমূল ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়াকে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। শাসক দলের দাবি, এই সংশোধনের নকশা বিজেপি তৈরি করেছে। তাই অনেকে মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হবে কিনা, তাতে বড় ধরনের সন্দেহ রয়েছে। কারণ, বুথ লেভেল অফিসাররা রাজ্য সরকারের কর্মচারী, ফলে শাসক দল তাদের প্রভাব ব্যবস্থায় রাখার পুরো আয়োজন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।