Mamata Banerjee On Constitution Murder Day : সংবিধান হত্যা দিবস পালনে আপত্তি, সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী
ডিজিটাল ডেস্ক, ১৮ জুন : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানান যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সংবিধান হত্যা দিবস পালনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে (Mamata Banerjee On Constitution Murder Day)। তবে, তিনি স্পষ্ট করেন যে ২৫ জুন এই দিবস পালনের বিষয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “দেশে প্রতিদিন গণতন্ত্রের হত্যা চলছে। তাই এই দিবস শুধু নির্দিষ্ট দিনে নয়, প্রতিদিনই পালন করা উচিত। সংবিধানে বারবার পরিবর্তন আনা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, “দেশে কি কোনও সংবাদমাধ্যম সত্যিই নিরপেক্ষ?” তিনি অভিযোগ করেছেন যে মিডিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয় কী প্রচার করতে হবে এবং কী এড়িয়ে যেতে হবে। তাঁর মন্তব্য অনুযায়ী, “বিজেপির কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, অথচ অন্যদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সংবিধানের সম্মানের কথা বলছেন তারাই, যারা নিজেরাই সংবিধানকে সম্মান করেন না।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “নোটবন্দির সময়ই গণতন্ত্রের হত্যা শুরু হয়েছিল। অসংখ্য মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে নোট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। কতজন প্রাণ হারিয়েছেন! তাহলে সেই দিনটিকে ‘ব্ল্যাক মানি ডে’ হিসেবে পালন করা হবে না কেন?”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে পহেলগাঁও হামলার পর পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানানো হয়েছিল। তাঁর দলের পক্ষ থেকে পাঁচটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “আজ পর্যন্ত কোনও সন্ত্রাসবিরোধী দিবস পালন করা হয়েছে কি? দেশে এত হামলা হয়েছে, তবুও এই বিষয়ে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অহমদাবাদের ঘটনা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন যে বিমান দুর্ঘটনায় বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, “একটি দুর্ঘটনা হতে পারে, কিন্তু যদি এটি পূর্ব পরিকল্পিত হয়, তাহলে তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।” তিনি অভিযোগ করেছেন যে ঘটনার তদন্ত প্রশাসনিক আমলাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে আগে রেলওয়ে সেফ্টি রিভিউ কমিটি এই ধরনের তদন্ত করত। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে বিমানের ক্ষেত্রেও একই রকম একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি থাকা উচিত। “এখনও পর্যন্ত কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি! মানুষের নিরাপত্তার দায় কে নেবে?”—এমন প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ওরা নিজেদের মতো সংবিধান হত্যা দিবস পালন করুক, তবে আমরা এই দিবস পালন করছি না। কারণ, বাস্তবতা হলো—এটি প্রতিদিন পালিত হওয়া উচিত, না যে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিনে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে দেশের কার্যত নেতৃত্ব অমিত শাহের হাতে চলে গেছে। তিনি বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী বাইরে ঘোরার মধ্যে ব্যস্ত, আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব শাহের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেই হয়, কারণ বাস্তবে তিনিই দেশ চালাচ্ছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, “জরুরি অবস্থার ৫০ বছর তো ২০২৪ সালেই পূর্ণ হয়েছে, তাহলে ২০২৫ সালে এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য কী?”—এই বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, “২০ জুন ‘বাংলা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত কে নিয়েছে?” তিনি জানিয়েছেন যে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ সচিব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বিভাগকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৫ অগস্ট, জুন মাস তো তার অনেক পরে। তাহলে বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস অন্য কেউ নির্ধারণ করবে?” তিনি অভিযোগ করেছেন যে “বিজেপি ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, যা বাংলার সংস্কৃতির প্রতি চরম অসম্মান।” মমতা স্পষ্ট করেছেন, “বাংলা দিবস পালন করবে বাংলার সরকার, এবং তা হবে ১ বৈশাখ।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে ১০০ দিনের কাজের টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়নি, অথচ শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “সেই অর্থের দায়িত্ব কে নেবে?” তিনি জানিয়েছেন যে রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে এই অর্থ প্রদান করেছে এবং ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি কেন্দ্রের উদ্যোগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, “এখন বাংলার অবজ্ঞা ও বঞ্চনা করেও ‘বাংলা দিবস’ পালন করতে এসেছে!”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “বিএসএফ থেকে শুরু করে দেশের সেনাবাহিনী—সবাই ‘জয় হিন্দ’ বলে, যা আমাদের গর্বিত করে। ‘জয় হিন্দ’ বাংলার সৃষ্টি, ঠিক যেমন ‘বন্দেমাতরম’-ও বাংলা থেকেই এসেছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “বাংলার ভূমিকা স্বাধীনতা আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের নীতির সমালোচনা করে বলেছেন, “রেল, বিমান—সবকিছুই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, যেন দেশটাই বেচে দেওয়া হয়েছে।” তিনি দাবি করেছেন যে “মানুষ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত।” তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার জন্য ধিক্কার জানাই। সমান্তরাল প্রশাসন তৈরির চেষ্টা করা উচিত নয়।” তিনি স্পষ্ট করেন যে রাজ্যের সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, আর রাজ্যপাল মনোনীত। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি অমিত শাহকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে কি তা মেনে নেওয়া হবে?”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাই কোর্টের ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত নির্দেশের প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “আমরা এই পিটিশন পুনর্মূল্যায়ন করব।” তিনি অভিযোগ করেছেন, “বাংলায় দল পাঠাচ্ছেন, কিন্তু আগে তো প্রাপ্য অর্থ দিন। চার বছর হয়ে গেল, একটিও টাকা দেওয়া হয়নি। এটি জনগণের অর্থ, তাদের অধিকারের বিষয়।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওবিসি সংরক্ষণ বিষয়ে আদালতের নির্দেশ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়, কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যা আমরা গতকাল হাতে পেয়েছি।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল এবং “আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই কাজ করেছি।” তিনি অভিযোগ করেছেন, “সিপিএম ও বিজেপি কখনওই ওবিসি সংরক্ষণ পাশ হতে দিতে চায় না, কারণ এটি সমাজের পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের জন্য। তাঁদের অধিকার আমরা কীভাবে কাড়তে পারি?”