Mamata Criticized Modi : বর্ধমানের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ! ভিনরাজ্যে বাংলার শ্রমিক ‘হেনস্তা’য় প্রশ্ন!
ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ অগাস্ট : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য সফর এবং বাংলার দুর্নীতি নিয়ে কটাক্ষের জবাব দিতে এবার পাল্টা আক্রমণে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Criticized Modi)। মোদীর নাম না করেই তাঁকে ‘দুকান কাটা’ বলে তীব্র কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, “কমিশন যেন এখন বিজেপির ললিপপ!”
শুক্রবার কলকাতায় মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধনে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। সেই বক্তব্যের জবাবেই শনিবার বর্ধমানে এক সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেও নম্বর কাটা হচ্ছে। বাংলাকে চোর বলা হচ্ছে। অথচ চোরদের, গদ্দারদের সঙ্গেই মিটিং চলছে। লজ্জা করে না!”
এরপর নিজের পরিচিত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে মমতা আরও বলেন, “লজ্জা, ঘৃণা আর ভয়—এই তিনটেকে জায়গা দেওয়া চলবে না। একটা কান কাটা থাকলে আরেকটা কাটা যাওয়ার ভয় থাকে। আর ওদের তো দুটো কানই কাটা! তাহলে ভয় কিসের?”
প্রসঙ্গত ভিনরাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে ফের মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বাংলার শ্রমিকরা এমনি বাইরে যাননি, তাঁদের কার্যত ‘জামাই আদর’ করে ভিনরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে—কারণ তাঁরা নানা ক্ষেত্রে দক্ষ ও পরিশ্রমী।
তবে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তবে কেন ওড়িশা, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাটে বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে?” এই পরিস্থিতিকে তিনি নিন্দনীয় বলে আখ্যা দেন।
একই সঙ্গে বাংলার মেধা ও প্রতিভার গুরুত্ব তুলে ধরে মমতা বলেন, “বাংলার মেধা ছাড়া বিদেশের নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও চলতে পারে না।” তাঁর আরও মন্তব্য, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট গুজরাটের লোকজনকে কোমরে শিকল বেঁধে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলার মেধাকে তাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।”
দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্তার অভিযোগ বারবার সামনে এসেছে। কোথাও মারধর, কোথাও আবার থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে অপমান—প্রতিটি ঘটনাতেই একটি বিষয় মিলছে, শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই তাঁদের লক্ষ্য করা হয়েছে।
বাংলা থেকে প্রায় ২২ লক্ষ শ্রমিক দেশের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করতে যান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই শ্রমিকদের ‘জামাই আদর’ করেই ভিনরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁর কথায়, “দয়া করে কেউ নিয়ে যায়নি। কেউ সোনার কাজ ভালো করেন, কেউ জামা-কাপড় তৈরি করতে দক্ষ, কেউ আবার কনস্ট্রাকশন কাজে পারদর্শী। তাঁদের দক্ষতার কারণেই ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”
কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। মমতা বলেন, “আজ তাঁদের ভাগ্যে জুটছে অপমান, বঞ্চনা, অত্যাচার আর অনাচার। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
নির্বাচন কমিশনকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ভোট এলেই এনআরসি করতে হবে? নতুন করে নাম কাটা শুরু হবে? নির্বাচন কমিশনকে প্রণাম জানাই, সালাম জানাই—কিন্তু অনুরোধ, দয়া করে বিজেপির ললিপপ হয়ে উঠবেন না। তা হলে কিন্তু মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর ঘন ঘন রাজ্য সফর নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্তব্য করেন, “ইলেকশন এলেই আপনি রোজ পরিযায়ী শ্রমিকের মতো চলে আসছেন। আমি চাই আপনি রোজ আসুন—কারণ সবই তো পাচ্ছেন ফ্রিতে! বিমান ফ্রি, হেলিকপ্টার ফ্রি, রাস্তা ফ্রি। আমি তো সরকারের কাছ থেকে এক পয়সাও নিই না।”
দমদমের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী তৃণমূলকে দুর্নীতির প্রতীক বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তার জবাবে এদিন বর্ধমানের সভা থেকে মমতা বলেন, “আমি সাতবারের সংসদ সদস্য। চাইলে মাসে আড়াই-তিন লাখ টাকা পেনশন পেতে পারতাম। কিন্তু এক পয়সাও নিই না। চিফ সেক্রেটারি বসে আছেন, তাঁর সামনেই বলছি—সার্কিট হাউসে থাকলেও নিজের বিল নিজেই মেটাই, সরকারের কাছ থেকে কিছু নিই না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি গান লিখি, বই লিখি—সেখান থেকেই আমার আয় হয়। আমি একা মানুষ, দিনে একবার খাই, আমার বেশি কিছু দরকার হয় না।”
মঞ্চ থেকে ফের একবার পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক শ্রমিককে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য তাঁদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি বঞ্চনার অভিযোগে কেন্দ্রকে আবারও তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের কোষাগার থেকেই সেই সমস্ত প্রকল্প চালানো হচ্ছে—এই বিষয়টি ফের একবার স্পষ্ট করে দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “কেন্দ্র ১৮৬টি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল। তাদের সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে বাংলাকে শূন্য নম্বর দেওয়া হচ্ছে। এটা কি মেনে নেওয়া যায়?”
এ থেকেই স্পষ্ট, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্র বনাম রাজ্য সংঘাতের অন্যতম বড় ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে এই আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ—যা নিয়ে দুই পক্ষই কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে।