ডিজিটাল ডেস্ক, ৬ মে: মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বাংলার বাড়ি প্রকল্প’-এর আওতায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্রতীকী ঘরের চাবি তুলে দেন তিনি। পাশাপাশি, পহেলগাঁও সন্ত্রাসের পর জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে শহিদ সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের স্ত্রীকে হোমগার্ড পদে চাকরির নিয়োগপত্র ও ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্যও তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সুতিতে আয়োজিত সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সমাজে সম্প্রীতির বার্তা দেন (Mamata on Murshidabad)। তিনি বলেন, “বিজেপি বা কোনও মৌলবাদী সংগঠনের উসকানিতে বিভ্রান্ত হবেন না। আপনারা যদি বিভক্ত হন, তাহলে যেন আমার গলাটাই শরীর থেকে আলাদা করে দেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট হব।” তিনি আরও বলেন, “আমি সব ধর্মকে ভালোবাসি। কেউ যদি হিংসা ছড়াতে আসে, তাহলে মা-বোনেরা তাকে রুখে দেবেন।”
এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন—সুতি, ধুলিয়ান এবং ফরাক্কার মানুষের জন্য একটি নতুন মহকুমা গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে এলাকার প্রশাসনিক কাজকর্ম আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই মুর্শিদাবাদে হিংসার সূত্রপাত হয়। সেই জেলাতেই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন, “ওয়াকফ নিয়ে বাংলায় কোনও প্রশ্ন নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। যদি কিছু বলার থাকে, তবে দিল্লিতে যান। বাংলায় আমি রয়েছি, এটা মনে রাখবেন।” তিনি আরও জানান, তাঁর সরকার কোনও ধর্মীয় সম্পত্তি অধিগ্রহণের পক্ষে নয়, এবং সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল নীতিতে বিশ্বাস করে।
মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, ভিন্রাজ্যে বাংলায় কথা বলার কারণে বাংলা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তিনি রাজ্যের বাইরে কর্মরত শ্রমিকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা বাংলায় ফিরে আসুন, রাজ্য সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি বা কোনও মৌলবাদী সংগঠনের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হবেন না। যদি আপনারা বিভক্ত হতে চান, তবে আমার গলাটা শরীর থেকে আলাদা করে দিন—তাতেই আমি শান্তি পাব।”
পাশাপাশি সুতি, ধুলিয়ান এবং ফরাক্কার মানুষদের জন্য নতুন মহকুমা অফিস গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদে ১৭৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সভা থেকে মুর্শিদাবাদে ১৬৭ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট ৭১৮ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা।
প্রসঙ্গত জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে নিহত সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদের সুতিতে প্রশাসনিক সভা থেকে নিহতের স্ত্রীকে পাশে নিয়েই এই ঘোষণা করেন তিনি। নিহত জওয়ানের স্ত্রীকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করার পাশাপাশি পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি জওয়ানের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্বও নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।