Mamata On NRC & ECI : ঝাড়গ্রামে NRC ইস্যুতে মমতার হুঙ্কার! কমিশনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত, কড়া বার্তা!

47

ডিজিটাল ডেস্ক, ৬ অগাস্ট : ঝাড়গ্রামের সভামঞ্চ থেকে তীব্র সুরে কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করে তিনি বললেন, “আপনি আগে আপনার জন্মের শংসাপত্র দেখান।”

পাশাপাশি ভোটার তালিকায় কারচুপি ঘিরে রাজ্য-রাজনীতিতে উত্তেজনা চরমে। এবার সরাসরি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইঙ্গিত দিলেন সংঘাতের (Mamata On NRC & ECI)।

বারুইপুর পূর্ব ও ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে মঙ্গলবার দুই ইআরও (Electoral Registration Officer) এবং দুই সহকারী ইআরও-কে সাসপেন্ড করেছে নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে, এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজুর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার ঝাড়গ্রামের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কমিশনকে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভোট তো এখনও আট মাস বাকি। এখন থেকেই অফিসারদের ভয় দেখাতে শুরু করেছো? ক্ষমতা দেখাচ্ছো? কার ক্ষমতায় এমন কাজ করছো? অমিত শাহর হয়ে দালালি করছো?”

প্রসঙ্গত ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর একের পর এক হেনস্তার প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস ‘ভাষা আন্দোলন’ কর্মসূচি শুরু করেছে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার ঝাড়গ্রামে রাস্তায় নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। মিছিল শেষে শহরের পাঁচমাথা মোড়ে একটি সভা করেন তিনি, সেখান থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারকে একের পর এক ইস্যুতে তীব্র আক্রমণ শানান।

বক্তৃতায় মমতা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, পুরনো নথির অজুহাতে বাংলার ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। তাঁর অভিযোগ, “এসআইআরের আড়ালে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মানুষ আতঙ্কে আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেব না। বিজেপির চালাকি মানুষ ধরে ফেলেছে। এনআরসি হচ্ছে না, হবেও না।”

এরপরেই তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে উদ্দেশ করে বলেন, “অমিত শাহ আগে তাঁর জন্মের শংসাপত্র দেখান।” পাশাপাশি, অসমে এনআরসি-র নামে যে বিভ্রান্তি ও বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

সভায় দাঁড়িয়ে ভোটার তালিকা ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর অভিযোগ, “এরা বাংলায় এসে সরকার চালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলার মানুষ ও প্রশাসন ওদের আসল চেহারা ভালো করেই চেনে।” মমতার মতে, সংশ্লিষ্ট ইআরও এবং সহকারী ইআরওদের সাসপেনশন আদতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি দাবি করেন, ভোটের আগেই পরিকল্পিতভাবে রাজ্যের প্রশাসনিক পরিকাঠামোয় চাপ তৈরি করতে চাইছে কমিশন। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বাংলা কারও চোখ রাঙানি সহ্য করবে না।”

কমিশনের উদ্দেশে আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী— কমিশন বিজেপির হয়ে কাজ করছে। তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, “অনেক সহ্য করেছি, এবার আর নয়। ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যদি বাংলার প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়, তাহলে আমি কিন্তু চুপ করে থাকব না। সারা বিশ্ব ঘুরে তোমাদের মুখোশ খুলে দেব।”

বিজেপি সরকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামের সভামঞ্চ থেকে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি আসল ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু মুখোশ খুলে যাবে সকলের। এমনটা করতে গেলে আমাদের দেহ পেরিয়ে যেতে হবে।”

এরপর অসম সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সাফ জিজ্ঞেস করেন, “কোন আইনে নোটিস পাঠানো হচ্ছে অসম থেকে?” একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকেও তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, কমিশন বিজেপির ইশারায় কাজ করছে এবং কার্যত তাদের ‘ক্রীতদাস’-এ পরিণত হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানান, তিনি বাংলার মানুষের পাশে আছেন এবং রাজ্যবাসীর সঙ্গে কোনও ধরনের অন্যায় সহ্য করবেন না। তাঁর কথায়, “বাঙালির অধিকার রক্ষার লড়াই আমি লড়ে যাব, পিছু হটব না।”