Mamata Oppose New Bill On Crime : ৩০ দিন হেফাজতে থাকলেই খোয়াতে হবে মন্ত্রিত্ব! বিতর্কিত বিল পেশ করলেন অমিত শাহ! তীব্র প্রতিবাদ মমতার
ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ অগাস্ট : তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মাঝেই লোকসভায় পেশ হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের অপসারণ সংক্রান্ত বিতর্কিত বিল। বুধবার, বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভ উপেক্ষা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় পেশ করেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল, যেগুলি মূলত সংবিধান সংশোধনের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে।
এই বিলগুলির মূল লক্ষ্য, গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকলে কোনও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী যেন তাঁদের পদকে সাংবিধানিক সুরক্ষা বা রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন। অর্থাৎ, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে তাঁদের অপসারণের পথ খুলে দেওয়া।
এই বিল ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিলটির কড়া বিরোধিতা করেছেন (Mamata Oppose New Bill On Crime)। তিনি আজকের দিনটিকে গণতন্ত্রের পক্ষে ‘কালো দিন’ বলে অভিহিত করেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে সাংবিধানিক ভারসাম্যের উপর আঘাত বলে দাবি করেছেন।
বুধবার লোকসভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ— কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসন (সংশোধনী) বিল ২০২৫, সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল ২০২৫ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্বিন্যাস (সংশোধনী) বিল ২০২৫। এই বিলগুলোর মূল লক্ষ্য সংবিধানে সংশোধন এনে গুরুতর অপরাধে জড়িত মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী যেন তাঁদের পদকে আর রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবিত বিধানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কোনও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিংবা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রী যদি গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ৩০ দিনের বেশি সময় জেলবন্দি থাকেন, তাহলে তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ থেকে অপসারিত হতে হবে। সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলি পরিবর্তনের মাধ্যমে এই নিয়ম কার্যকর করা হবে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা বললেও, বিরোধীরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে।
প্রস্তাবিত অপসারণ বিল নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এই বিল ভারতের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর সরাসরি আঘাত। তিনি বলেন, ফেডারেল কাঠামো, ক্ষমতার বিভাজন এবং বিচারিক পুনর্বিবেচনার অধিকার— এইসব নীতি সংবিধানের এমন ভিত্তি, যেগুলো সংসদ পর্যন্ত পরিবর্তন করতে পারে না। তাই এই বিলকে তিনি গণতন্ত্রের জন্য ‘মৃত্যুর পরোয়ানা’ বলে অভিহিত করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্রের আসল উদ্দেশ্য হল এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। তাঁর ভাষায়, এই বিল আসলে ‘এক দল, এক ব্যক্তি, এক সরকার’ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র। এটি কার্যত সংবিধানের মূল ভিত্তিকেই ধ্বংস করবে। পাশাপাশি, তিনি কড়া ভাষায় অভিযোগ করেন যে, ইডি ও সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে অস্বাভাবিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির উপর হস্তক্ষেপ করার রাস্তা তৈরি করছে কেন্দ্র।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট একসময় এই সংস্থাগুলিকে ‘খাঁচার তোতা’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। এখন সেই সংস্থাগুলোকেই জনগণের রায় ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপরে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা।
শেষে তিনি বলেন, “এই বিলকে যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে। সংবিধান জনগণের, কোনও সরকারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। যদি জনগণের অধিকার ও আদালতের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়, মানুষ তা কখনো মেনে নেবে না। গণতন্ত্র এখনই রক্ষা করতে হবে।”