Manojit Mishra Police Custody : কসবা কাণ্ডে মনোজিৎ-সহ চারজনের ফের পুলিশি হেফাজত

42

ডিজিটাল ডেস্ক, ৬ অগাস্ট : কসবায় আইন কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ও তার তিন সঙ্গীকে ফের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে চার অভিযুক্তকে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। অভিযুক্তরা হল— মনোজিৎ মিশ্র, আইনের দুই ছাত্র জায়েব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় এবং নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, চারজনকেই ৮ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখা হবে (Manojit Mishra Police Custody)।

মঙ্গলবার মনোজিৎ মিশ্রের পক্ষ থেকে তাঁর আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় এবং পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য জামিনের আবেদন জানান। তবে জায়েব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে কোনও আবেদন করেননি। এদিনই প্রথমবার মনোজিতের জন্য জামিনের আর্জি পেশ করা হয় আদালতে।

জামিনের বিরোধিতা করে পুলিশ জানায়, লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে ইতিমধ্যে এসেছে বৈদ্যুতিন ও ডিজিটাল তথ্যের ফরেনসিক রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজ এবং কেন্দ্রীয় ফরেনসিক রিপোর্ট। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের আগের বয়ানের সঙ্গে এই রিপোর্টগুলির বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখতে ও মেলানোর জন্য চার অভিযুক্তকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

পুলিশ আরও জানায়, মনোজিৎ এবং তার সঙ্গীরা প্রভাবশালী। জামিন পেলে তাঁরা মামলার সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। এই যুক্তিতে তদন্তে বিঘ্ন এড়াতে তাঁদের পুলিশ হেফাজতেই রাখার আর্জি জানানো হয়।

আদালতে মনোজিৎ মিশ্রের আইনজীবী পাল্টা দাবি করেন, অভিযোগকারিণী ছাত্রী যে গণধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর বক্তব্য, অভিযুক্ত জায়েব আহমেদ ওই ছাত্রীকে দোকান থেকে ইনহেলার কিনে দিয়েছিল। পরে সেই টাকার জন্য জায়েব ছাত্রীকে মেসেজ পাঠায়। আইনজীবীর দাবি, সেই রাগ থেকেই ছাত্রী এই অভিযোগ আনেন। তিনি আরও বলেন, ছাত্রী নিজেই ধূমপানের কারণে অসুস্থ বোধ করছিলেন এবং ইনহেলারের প্রয়োজন হয়েছিল। অভিযোগকারিণী মনোজিতের সঙ্গে কথাও বলেন এবং পরে স্বেচ্ছায় ইউনিয়ন রুমে যান। তাহলে অপহরণের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে?

প্রসঙ্গত, আইনজীবীর প্রশ্ন, ঘটনাটি যদি সত্যিই সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ঘটে থাকে, তাহলে এত দীর্ঘ সময় ধরে পাশের পুলিশ কিয়স্ক, চায়ের দোকান বা আশপাশের পথচারীদের কেউ কিছু টের পেল না কেন? কলেজ চত্বর থেকে মাত্র ৬০০ মিটার দূরে কসবা থানা, তা সত্ত্বেও অভিযোগকারিণী ও তাঁর বাবা থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার পরও কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি কেন?

মনোজিতের বান্ধবী, যিনি নিজেও একজন আইনজীবী এবং অভিযুক্তের পক্ষে সওয়াল করছেন, তাঁকে পুলিশ কেন লালবাজারে বা তাঁর বাড়িতে জেরা করতে চায়—এই প্রশ্নও তোলেন মনোজিতের আইনজীবী। তাঁর মতে, চাইলে সরকারি আইনজীবী বা অভিযুক্তের আইনজীবীর অফিসেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। এ প্রস্তাবে শেষপর্যন্ত রাজি হয় পুলিশ। অবশেষে, ঘটনাটির সময়কাল অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে অভিযোগকারিণী কার কার সঙ্গে ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছিলেন, তা জানার জন্য তাঁর মোবাইল পরীক্ষা করার আবেদনও জানানো হয় আদালতে।

মনোজিৎ মিশ্রের আইনজীবীর দাবি, এনআরএস হাসপাতালের সামনে পুলিশ তাঁকে জোর করে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে আঙুলের ছাপ নেয়। তবে এই ঘটনায় কোনও ডিএনএ পরীক্ষাও হয়নি বলে অভিযোগ। আইনজীবীর আরও অভিযোগ, পরনের পোশাক তল্লাশির আগে মনোজিতকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল।

এই প্রসঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গ্রেফতারের পর মনোজিতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে, যেখানে চিকিৎসকেরা জানান তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। পুলিশ স্পষ্ট করে জানায়, মনোজিতকে কখনও এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেই কারণে তাঁর আইনজীবীদের দাবি ভিত্তিহীন বলেই মনে করছে পুলিশ।