ডিজিটাল ডেস্ক, ১০ অগাস্ট : অপারেশন সিঁদুর স্পষ্ট করে দিয়েছে—সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতে আঘাত হেনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানকে পিছু হটতে বাধ্য করার ক্ষমতা ভারতের রয়েছে। রবিবার বেঙ্গালুরুতে দাঁড়িয়ে সেই বার্তাই ফের দৃঢ় কণ্ঠে দিলেন প্রধানমন্ত্রী (Modi On Technology)। তাঁর কথায়, এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দেশের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের শক্তি এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অবদান।
সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে রবিবার বেঙ্গালুরু সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সফরে তিনি কেএসআর স্টেশন থেকে তিনটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন। ট্রেনগুলি চলবে বেলগাভি, অমৃতসর হয়ে বৈষ্ণদেবী এবং নাগপুর হয়ে পুণে পর্যন্ত।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করেন, যার আওতায় গঠিত হবে বেঙ্গালুরুর মেট্রোর নতুন অরেঞ্জ লাইন। পাশাপাশি, তিনি বেঙ্গালুরুর মেট্রো প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়েরও উদ্বোধন করেন।
এই উপলক্ষে কর্নাটকের রাজ্যপাল থাওয়ারচাঁদ গেহলট, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপমুখ্যমন্ত্রী ডি. কে. শিবকুমার এবং রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ইয়োলো লাইনের মেট্রোতে যাত্রাও করেন প্রধানমন্ত্রী। আরভি রোড থেকে বোম্মাসান্দ্রা পর্যন্ত বিস্তৃত ১৯ কিলোমিটারের এই মেট্রোপথ নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭,১৬০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, এপ্রিলে পহেলগামের বৈসরন এলাকায় অতর্কিতে গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা, যাদের মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন পর্যটক। এই নৃশংস ঘটনার দায় স্বীকার করে লস্করের ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট’। এর জবাবে ভারত পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। শুধু তাই নয়, এরপর জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের দমন করে ভারতীয় সেনা।
এদিন ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষমতায়ণই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, আজ দেশের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে গেছে ডিজিটাল সুবিধা। বিশ্বজুড়ে রিয়েল টাইম UPI লেনদেনের মধ্যে ৫০ শতাংশই ভারতে হচ্ছে, যা এক বড় মাইলফলক। সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যেকার ব্যবধান কমাতে প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। কারণ, ভারতকে শুধু বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা করতেই হবে না, নেতৃত্বও দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের শহরগুলো যদি স্মার্ট, দ্রুতগামী ও আধুনিক হয়, তবে আমরা আমাদের লক্ষ্যপথে আরও দৃঢ়ভাবে এগোতে পারব।”
ইয়েলো লাইনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, “আজ আরভি রোড থেকে বোম্মাসান্দ্রা পর্যন্ত শুরু হওয়া এই মেট্রো পথ বেঙ্গালুরুর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে সংযুক্ত করবে। এটি যাত্রার সময় কমাবে এবং শহরের জীবনযাত্রাকে আরও দ্রুত ও সুশৃঙ্খল করে তুলবে।”
এদিন তিনি উদ্বোধন করেন তিনটি নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন, যার ফলে দেশের উচ্চগতির এই ট্রেনের মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১৫০। একই সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত বেঙ্গালুরু মেট্রোর ইয়োলো লাইন চালু হয়। এছাড়া শিলান্যাস হয় ১৫,৬১০ কোটি টাকার মেট্রো-ফেজ ৩ প্রকল্পের, যেখানে তৈরি হবে ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উঁচু লাইন ও ৩১টি নতুন মেট্রো স্টেশন।
কন্নড় ভাষায় বক্তব্য শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরু হল নতুন ভারতের প্রতীক, যে শহর দেশকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বমানের আইটি মানচিত্রে।’’ এই সাফল্যের পেছনে এখানকার মানুষের মেধা ও কঠোর পরিশ্রমকেই কৃতিত্ব দেন তিনি।
বক্তব্যে মোদী দেশের উন্নয়নের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন। জানান, ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র ৫টি শহরে মেট্রো পরিষেবা ছিল, আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪টি শহরে, যার মোট বিস্তৃতি ১,০০০ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। গত ১১ বছরে রেলপথ বিদ্যুতায়ন দ্বিগুণ হয়েছে। বিমানবন্দরের সংখ্যা ৭৪ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০-র বেশি। জাতীয় জলপথ যেমন সম্প্রসারিত হয়েছে, তেমনই ডিজিটাল লেনদেনেও বিপুল অগ্রগতি হয়েছে—বর্তমানে বিশ্বের ৫০% রিয়েল-টাইম ডিজিটাল লেনদেনই হচ্ছে ভারতের ইউপিআই-এর মাধ্যমে।