Mohunbagan Club Election : অবশেষে কাটল জট! মোহনবাগানের সচিব হচ্ছেন সৃঞ্জয় বসু, দেবাশিস সভাপতি

9

ডিজিটাল ডেস্ক, ৯ জুন : গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মোহনবাগানের নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা চলছিল, যা সোমবার সমাপ্ত হল। সচিব পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সৃঞ্জয় বসু—তিনি বিকেল পাঁচটা নাগাদ মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার আগেই ক্লাবে উপস্থিত হন দেবাশিস দত্ত, তবে তিনি মনোনয়ন দেননি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে পারেন (Mohunbagan Club Election)।

দুই শিবিরের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা কয়েক দিন ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। সৃঞ্জয় বসু ও দেবাশিস দত্ত তাঁদের নির্বাচনী সভাগুলিতে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ চালাচ্ছিলেন। অনেকের মতে, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের পরামর্শেই এই সমঝোতা হয়েছে। তবে, সাংবাদিক বৈঠকে দেবাশিস দত্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, “একেবারেই নয়। মোহনবাগান ক্লাব সমাজের সবচেয়ে বড় প্রতিচ্ছবি। এখানে প্রচুর রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যুক্ত রয়েছেন। আমরা কাউকে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক হিসাবে দেখতে চাই না। আমাদের কাছে সবাই মোহনবাগানি।”

সৃঞ্জয় বসু বলেন, “গণতন্ত্র থাকা অত্যন্ত জরুরি। এবার প্রচুর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যাগুলি জানতে পেরেছি এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। গণতন্ত্র না থাকলে সদস্যদের সঙ্গে যোগসূত্রই থাকে না।” তিনি আরও বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন কেন নির্বাচন হয়নি। কিন্তু সদস্যদের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে লড়াই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তাই কোথাও সেটার লাগাম টানা প্রয়োজন। আগেও একসঙ্গে কাজ করেছি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটেছে।”

সোমবার দেবাশিস দত্তকে হাসতে হাসতে মোহনবাগান ক্লাবে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তিনি সাংবাদিক ও সদস্য-সমর্থকদের সঙ্গে মজাও করেন। ২০ মিনিট পরে ক্লাবে ঢোকেন সৃঞ্জয় বসু। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দেবাশিস তাঁর পাশেই ছিলেন। দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়, এবং মজা করে একে অপরকে হাসতেও দেখা যায়। এদিনই ছিল মোহনবাগানে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। সমঝোতা আগেই হয়ে যাওয়ার পরেও ক্লাবে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেই কারণে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তারা ক্লাবের আশেপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন.

মোহনবাগান ক্লাবে সভাপতি পদে সরাসরি নির্বাচন হয় না। তাই দেবাশিস দত্তকে কোনও মনোনয়ন জমা দিতে দেখা যায়নি। সৃঞ্জয় বসু যদি সচিব পদে নির্বাচিত হন, তাহলে তাঁর নেতৃত্বে একটি কার্যকরী কমিটি গঠিত হবে, যা দেবাশিস দত্তকে নতুন সভাপতি হিসাবে বেছে নেবে। অর্থাৎ, স্বপন সাধন (টুটু) বসু আর সভাপতি থাকছেন না। নতুন কার্যকরী কমিটি সহ-সভাপতিদেরও নির্বাচন করবে। সোমবার মোট ২২টি পদের জন্য সদস্যরা মনোনয়ন দাখিল করেছেন। ১০ ও ১১ জুন জমা পড়া মনোনয়নপত্রগুলি খতিয়ে দেখা হবে। ১২ ও ১৩ জুন প্রার্থীরা যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চান, তাহলে তা করতে পারবেন। এরপরও একটি পদের জন্য একাধিক প্রার্থী থাকলে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

এদিন মোহনবাগান ক্লাবে বিভিন্ন পদে মনোনয়ন জমা পড়েছে।
সচিব পদে মনোনয়ন দিয়েছেন সৃঞ্জয় বসু।
সহ-সচিব পদে রয়েছেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
কোষাধ্যক্ষ পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
অর্থ-সচিব পদে রয়েছেন সুরজিৎ বসু।
মাঠ-সচিব পদে মনোনয়ন দিয়েছেন শাশ্বত বসু।
ফুটবল-সচিব পদে রয়েছেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
ক্রিকেট-সচিব পদে মনোনয়ন দিয়েছেন সম্রাট ভৌমিক।
হকি-সচিব পদে রয়েছেন শ্যামল মিত্র।
টেনিস-সচিব পদে মনোনয়ন দিয়েছেন সিদ্ধার্থ রায়।
যুব ফুটবল-সচিব পদে রয়েছেন শিল্টন পাল।
এছাড়া কর্মসমিতির পদে মনোনয়ন দিয়েছেন—
মুকুল সিনহা, সোহিনী মিত্র চৌবে, সোমেশ্বর বাগুই, কাশীনাথ দাস, দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্ত ঘোষ, দেবজ্যোতি বসু, রঞ্জন বসু, পার্থজিৎ দাস, সঞ্জয় মজুমদার এবং অনুপম সাহু।

পরে সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে অংশ নেন দেবাশিস দত্ত। তিনি বলেন, “মোহনবাগান ক্লাবের উন্নতির জন্যই দুই পক্ষ নিজেদের মতো করে লড়াইয়ে নেমেছিল। তবে কিছু ঘটনা ঘটেছে যা ক্লাবের ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই নয়—এটি দু’পক্ষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।” তিনি আরও বলেন, “সৃঞ্জয় আমার অত্যন্ত ভালো বন্ধু। আমরা বহু বছর একসঙ্গে কাজ করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়ে দু’জনে বৈঠকে বসেছি। আমি সৃঞ্জয়ের কাছে কৃতজ্ঞ-ও মোহনবাগানের স্বার্থের কথা ভেবেছে, আমিও তাই। নতুন কার্যকরী কমিটি মোহনবাগানকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “আজ থেকে কোনও বিভাজন নেই—আমরা একটাই দল, মোহনবাগান। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করব।”