ডিজিটাল ডেস্ক ২০শে জুলাইঃ টানা পাঁচদিন ধরে নাগাড়ে অতি ভারী বৃষ্টিতে নাস্তানাবুদ দেশের বাণিজ্য নগরী মুম্বই। আবহাওয়া অফিস আজ, বুধবারেও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। চলতি নিম্নচাপের জেরে মহারাষ্ট্র জুড়ে অতি ভারী বৃষ্টিতে বলি হয়েছেন ২১ জন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রবল বর্ষণের জেরে বিপর্যয় মুম্বইয়ের মনোরেলেও। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে প্রায় দু’ঘণ্টা একই জায়গায় আটকে রইল মনোরেল। সেখান থেকে অনেক চেষ্টার পর প্রায় ৭৮২ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনায় অতগুলি যাত্রীর মধ্যে আতঙ্ক,হুড়োহুড়ি ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকজন যাত্রী শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন। বিদ্যুৎ ও এসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুজন অসুস্থ হয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। শহর ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি জেলা জলের নীচে ডুবে রয়েছে। কয়েকশো হেক্টর কৃষিজমি পুরো প্লাবিত হয়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মঙ্গলবারেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, আজ ও আগামিকাল, বৃহস্পতিবার আরও বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে পারে। আরব সাগরের জলোচ্ছ্বাস প্রায় দেড় তলা বাড়ির সমান উঁচুতে ঝাপটা মারছে(Mumbai Flood)।

মুম্বইয়ের বৃষ্টিতে সবথেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শহরতলির ট্রেন ও বিমান পরিষেবা। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ট্রেন পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে চলছে। পুরসভাগুলি ও রাজ্য সরকার স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারিতে ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। শহরবাসীকে অত্যন্ত জরুরি কাজ ছাড়া রাস্তায় বেরতে নিষেধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র নিচু জায়গাগুলি নয়, উঁচু জায়গাগুলিতেও অধিকাংশ ঘর-আবাসন, হাসপাতাল, কলেজের একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে। এই বিপর্যয়ের মধ্যে আরও একটি বড় দুর্ঘটনা বরাতজোরে এড়ানো সম্ভব হয়েছে। দুটি অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা মনোরেল মুম্বইয়ে দুটি স্টেশনের মাঝে বিকল হয়ে যায়।
কোথাও কোথাও জল মানুষ সমান উঁচু দিয়ে বইছে। রাজ্যের অধিকাংশ বাঁধের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বওয়ায়, সেগুলি থেকে জল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আর তাতে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও হিসাবের বাইরে। আর এক সপ্তাহ পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্রের বৃহত্তম উৎসব গণেশ চতুর্থী। তার আগে এরকম লাগাতার বৃষ্টিতে মাথায় হাত পড়েছে প্রতিমা শিল্পীদের। অধিকাংশ স্থানীয় কুমোরপাড়াতেই জল ঢুকে প্রচুর প্রতিমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এই অবস্থায় মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা বুধবারের জন্য বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে শুরু করবে। মুম্বই, ঠানে, পালঘর, রায়গড় এবং রত্নাগিরি জেলায় লাল সতর্কতা এখনও জারি রয়েছে। বাতাসের তীব্রতা প্রায় ৪০-৫০ কিমি ও ঝাপটার গতি প্রায় ৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বইছে।
তবে বুধবার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় রাত ৩টে থেকে লোকাল ট্রেন ও বাস পরিষেবা ধীরে ধীরে চালু করা হয়েছে। সান্তাক্রুজ অবজারভেটরিতে এদিন সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গত ১১ ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে হাওয়া অফিস জানিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচবছর পর এই প্রথম অগস্ট মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টির সাক্ষী থাকল স্বপ্নের নগরী মুম্বই। গত ১০৮ ঘণ্টায় (১৫-১৯ অগস্ট) মুম্বইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮৩৭.৩ মিলিমিটার। এবং চলতি বর্ষা মরশুমে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২,৩১০.৮ মিলিমিটার।