ডিজিটাল ডেস্ক ২২শে অগাস্টঃ কয়েকঘণ্টা পরই রাজ্যে তিন মেট্রোরুটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তার আগে চর্চায় গোটা প্রকল্প। এ নিয়ে রাজনৈতিক পারদও চড়ছে বেশ পরিমাণে। তথ্য বলছে এই কাজটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হতে লেগে গেল প্রায় ১০৪ বছর সময়। পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ১৯২১ সালে। বিজেপি নেতানেত্রীদের বক্তব্য ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বিধান রায়,কেউই পারেননি গঙ্গার নীচে দিয়ে মেট্রো চালাতে। অবশেষে কাজ শেষ করলেন মোদীই!তবে রাজনৈতিক মহলের কারো কারো বক্তব্য অতীতেই এই রুটের ভাবনা ছিল রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৬ বছর আগে রেলমন্ত্রী হিসাবে বাজেট প্রস্তাবের পাশাপাশি এই মেট্রো প্রকল্পগুলির অর্থ বরাদ্দ করে কাজ শুরু করিয়েছিলেন বলে মত বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের। কেউ কেউ আবার বলছে কলকাতায় মেট্রো লাইনের পরিকল্পনা হাতে নেন তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর ১৯৬৯ সালে তাঁর পরিকল্পনায় সায় দেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। যদিও সেই সময় ইস্ট-ওয়েস্ট লাইন নয়। উত্তর-দক্ষিণ লাইনকেই তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হয় সেসময় । ১৯৭২ সালে কলকাতা মেট্রোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী নিজেই(Narendra Modi)।
পাশাপাশি আজ অর্থাৎ শুক্রবার বিকাল ৪টে নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কলকাতায় নতুন তিনটি মেট্রো পথ উদ্বোধন করবেন তিনি। তারপর দমদম সেন্ট্রাল জেল ময়দানে রয়েছে সভা। এই উদ্বোধনের পাশাপাশি মোদী নিজেও বঙ্গে প্রবেশের আগে ফের টুইট করে বলেছেন সমাজমাধ্যমে ইংরেজি ও বাংলায় একাধিক পোস্টে মোদী লিখেছেন,‘কলকাতার জনসভায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত হতে আমি উদ্গ্রীব। প্রতি দিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনতার আক্রোশ বাড়ছে। বিজেপির উন্নয়ন নীতির কারণে পশ্চিমবঙ্গ এখন বিজেপির দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।’ এই পোস্টেই স্পষ্ট যে, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে ‘জনরোষ’ এবং বিজেপির ‘উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে’র কথা মোদীর ভাষণে থাকবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পশ্চিমবঙ্গবাসীকে পেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রী আগেও একাধিক বার জনসভার মঞ্চ থেকে তোপ দেগেছেন। শুক্রবারের সভায় সেই বিষয়টিও তিনি আবার টেনে আনতে পারেন বলে বিজেপির একাংশের ধারণা। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন,এদিন দমদমে একটি প্রশাসনিক সভা এবং রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গের সব বিজেপি পরিবার প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেন সেই অপেক্ষায় বসে আছে। আরও বলেন কলকাতা সেক্টর ফাইভ এলাকায় মেট্রো সংযোগে সমস্যা থাকলেও স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। যদিও রাজ্য সরকারের ভূমিকা এবং জমিনীতির অসংগতির কারণেই একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বাধা তৈরি হচ্ছে।
দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার মঞ্চ তৈরীর কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে কড়া নিরাপত্তা এবং পরিষেবা প্রস্তুতির মধ্যেই রয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ আগষ্ট কলকাতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন এবং সেখান থেকেই যাত্রা করবেন যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে। সেখানে উদ্বোধন করবেন নতুন তিনটি মেট্রো পথের।
বিকেল ৪টে নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর নামার কথা। সেখান থেকে প্রথমে যাবেন নবনির্মিত যশোহর রোড মেট্রো স্টেশনে। ইয়েলো লাইনের (নোয়াপাড়া-বারাসত) নোয়াপাড়া থেকে জয়হিন্দ বিমানবন্দর অংশে মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন তিনি। সেখান থেকেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অরেঞ্জ লাইনের (নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর) হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশন (রুবি) থেকে বেলেঘাটা স্টেশন এবং গ্রিন লাইনের (সেক্টর ফাইভ-হাওড়া ময়দান) এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে শিয়ালদহ স্টেশন অংশে মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন। তার পরে যশোহর রোড স্টেশন থেকে মেট্রো চড়ে তিনি জয়হিন্দ বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত যাবেন। আবার মেট্রোতেই যশোহর রোড ফিরবেন। তার পরে সড়কপথে যাবেন সভাস্থলে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী ৫২০০ কোটিরও বেশি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন। দমদমে জনসভা শুরুর আগে প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী শিলান্যাস করবেন ছয় লেনের এলিভেটেড কোনা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের। ৭.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে তৈরিতে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।