Narendra Modi on Operation Sindoor : ‘সিঁদুর যারা মুছে দেবে, তাদেরও মুছে যেতে হবে’, গুজরাত থেকে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

12

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ মে : গুজরাতের জনসভা থেকে পাকিস্তানকে ফের হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যারা সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত।’ তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে ভারতীয়দের ‘সংস্কার’ ও ‘ভাবনার অভিব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করেন (Narendra Modi on Operation Sindoor)।

সোমবার গুজরাতের দাহোদে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পহেলগাঁওয়ের ঘটনাকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপের পর ভারত কি চুপ করে থাকতে পারত? মোদী কি চুপ করে থাকতে পারত? যারা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত।’’ তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে শুধুমাত্র সামরিক অভিযান নয়, বরং ভারতীয়দের সংস্কার এবং ভাবনার অভিব্যক্তি হিসেবেও উল্লেখ করেন। মোদী আরও বলেন, ‘‘যারা সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে, তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে মোদীর সঙ্গে মোকাবিলা করা কতটা কঠিন।’’

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন, যার মধ্যে ২৫ জন ছিলেন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক। অভিযোগ, জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে একটি বিশেষ ধর্মের পুরুষদের নিশানা করে হত্যা করেছিল, অথচ মহিলা ও শিশুদের আক্রমণ করা হয়নি। অনেকেই তাঁদের স্বামীকে নিজের চোখের সামনে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছেন। এই ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত একাধিক পদক্ষেপ নেয়। ৬ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান হামলা চালায়, যার ফলে টানা চার দিন ভারত-পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। গুজরাতের দাহোদের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘সন্তানের সামনে তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সেই দৃশ্য আজও রক্ত গরম করে দেয়। সন্ত্রাসীরা ১৪০ কোটি ভারতীয়কে চ্যালেঞ্জ করেছিল, আর মোদী সেটাই করেছে, যার জন্য দেশবাসী আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।’’

পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘তিন বাহিনীকেই আমি পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। ওরা যা করে দেখিয়েছে, তা গোটা দুনিয়া গত কয়েক দশক ধরে দেখেনি। আমরা সীমান্তের ও পারে সন্ত্রাসবাদীদের সবচেয়ে বড় ন’টি ঘাঁটি খুজে বার করেছি। ২২ তারিখ ওরা যে খেলাটা খেলেছিল, ৬ তারিখ রাতে ২২ মিনিটের মধ্যে আমরা তা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি। তার পর পাকিস্তানি সেনা যখন দুঃসাহস দেখাল, তখন আমাদের সেনাবাহিনী তাদের অবস্থাও খারাপ করে দিল। ভারতীয় সেনার শৌর্যকে আমি প্রণাম জানাচ্ছি।’’

পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘‘তিন বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম, এবং তারা যা করেছে, তা বিশ্ব গত কয়েক দশকে দেখেনি। আমরা সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসবাদীদের সবচেয়ে বড় ন’টি ঘাঁটি চিহ্নিত করি। ২২ তারিখ তারা যে ষড়যন্ত্র করেছিল, ৬ তারিখ রাতে মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে আমাদের সেনাবাহিনী তা ধ্বংস করে দেয়। এর পর পাকিস্তানি সেনা যখন প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন ভারতীয় বাহিনী তাদের কঠোর জবাব দেয়। ভারতীয় সেনার অসামান্য সাহস ও দক্ষতাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।’’

পাকিস্তানকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, ‘‘দেশভাগের পর জন্ম নেওয়া দেশটির মূল লক্ষ্য ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতা করা, ভারতকে ঘৃণা করা এবং ক্ষতি করা। কিন্তু ভারতের উদ্দেশ্য একেবারে ভিন্ন। ভারতের লক্ষ্য দেশের দারিদ্র দূর করা, অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং সেনাবাহিনীকে সুদৃঢ় করা। কারণ, শক্তিশালী সেনাবাহিনীই বিকশিত ভারতের ভিত্তি। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছি।’’

কিছু দিন আগে রাজস্থানের এক জনসভা থেকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগাঁওয়ের ঘটনাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘‘আমার শরীরে এখন রক্ত নয়, সিঁদুর বইছে। এটা প্রতিশোধের খেলা নয়, বরং ন্যায়ের নতুন রূপ, যার নাম অপারেশন সিঁদুর।’’ মোদীর এই বক্তব্যের পর পাকিস্তান কড়া বিবৃতি দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা এই মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উস্কানিমূলক’ বলে আখ্যা দেয়। গুজরাতের জনসভা থেকেও একই সুরে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।