ডিজিটাল ডেস্ক, ৮ অগাস্ট : ১৯৬১ সালের পুরনো আয়কর আইনকে বাতিল করে নতুন এক কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছিল ‘নতুন আয়কর বিল, ২০২৫ (New Income Tax Bill 2025)’। এই বিল প্রথমবার সংসদে পেশ হয় চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি। তবে শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদিত যে খসড়া বিলটি সামনে এসেছে, তা আগের তুলনায় সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ। এই নতুন সংস্করণটি আগামী ১১ আগস্ট সংসদে পুনরায় পেশ করা হবে বলে কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল নতুন আয়কর বিলটি। তবে শুরু থেকেই এর কিছু ধারা নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। একাধিক বিরোধী দল সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে প্রতিবাদ জানায়।
কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি ও আরএসপি সাংসদ এনকে প্রেমচন্দন দাবি করেন, নতুন এই আয়কর বিল পূর্ববর্তী আইনের তুলনায় আরও জটিল এবং সাধারণ মানুষের বোঝার অযোগ্য। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বিলটিকে ‘যান্ত্রিক ও নির্দয়’ বলে কটাক্ষ করেন। এই পরিস্থিতিতে বিলটি পাঠানো হয় সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে। বিজেপি নেতা বৈজয়ন্ত পান্ডার নেতৃত্বে ওই কমিটি বিলটির বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে বেশ কিছু সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে পরিমার্জিত ও সংশোধিত রূপে নতুন আয়কর বিল ২০২৫ আগামী ১১ আগস্ট সংসদে ফের পেশ করা হবে।
বাজেট ২০২৪ পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছিলেন, প্রায় ছ’দশক পুরনো আয়কর আইন ১৯৬১-এর জায়গায় আনা হবে একটি নতুন, সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য ও বিতর্ক-মুক্ত করব্যবস্থা। সেই লক্ষ্যেই ২০২৫ সালের আয়কর বিলটি ফেব্রুয়ারিতে লোকসভায় পেশ করা হয় এবং পরবর্তী পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয় সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে।
দীর্ঘ পর্যালোচনা ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৈজয়ন্ত পাণ্ডার নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি ২১ জুলাই লোকসভায় জমা দেয় এক বিশাল রিপোর্ট—মোট ৪,৫৮৪ পাতার। সেখানে ২৮৫টি সুপারিশ রাখা হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য কর ব্যবস্থাকে সরল ও স্বচ্ছ করা, আইনের জটিলতা কমানো এবং করদাতাদের হয়রানি হ্রাস করা।
এই পর্যালোচনার অংশ হিসেবে কমিটি বৈঠক করে কর বিশেষজ্ঞ, শিল্পপতি, আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ, এনজিও, মধ্য স্তরের ট্যাক্স প্র্যাক্টিশনার ও এসএমই প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তাব বিবেচনা করে তারা বিলটির খসড়ায় পরিমার্জন আনে। এই প্রক্রিয়ার পর গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরনো আয়কর বিলটি প্রত্যাহার করে নেন। এরপর সংশোধিত বিলটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়, যেখানে শুক্রবার তা অনুমোদন লাভ করে।
নতুন এই আয়কর আইন কার্যকর হলে, দীর্ঘদিনের ১৯৬১ সালের পুরনো আইন যুগের অবসান ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি দেশের কর ব্যবস্থায় আরও আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও করদাতা-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবে। এখন নজর ১১ আগস্টের দিকে—যেদিন সংশোধিত আয়কর বিলটি সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ হবে।
নতুন আয়কর আইন: কী পরিবর্তন আনতে চলেছে?
১. সাধারণ করদাতাদের জন্য কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও বোধগম্য করা হবে।
২. কর রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া হবে স্বচ্ছ ও ঝামেলাহীন।
৩. ব্যবসা ও করপোরেট সংস্থাগুলির জন্য কমবে প্রশাসনিক জটিলতা।
৪. উচ্চ আয়ের করদাতাদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে করের হার বা দায় বাড়তে পারে।
সরকারের দাবি, এই পরিবর্তনগুলি কার্যকর হলে ভারতের আয়কর ব্যবস্থায় একটি বড় রূপান্তর ঘটবে। এর ফলে করদাতাদের অভিজ্ঞতা হবে আরও সহজ, এবং আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে।