ডিজিটাল ডেস্ক, ১৯ জুলাই : পাটনায় খুন করে বাংলায় পালিয়ে লুকোনোর চেষ্টা করেছিল অভিযুক্তরা। কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে ঢুকে গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশের জালে ধরা পড়ল আরও ৫ জন। সূত্রের খবর, পুলিশ ও এসটিএফের যৌথ অভিযানে নিউটাউনের সাপুরজি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন ট্র্যাক করেই তাদের পাকড়াও করা হয়েছে বলে জানা গেছে (Patna Killers Arrest)।
গত বৃহস্পতিবার সকালে পারস হাসপাতালে ঢুকে পড়ে একদল দুষ্কৃতী। তারা সোজা আইসিইউতে ঢুকে ২০৯ নম্বর কেবিনে শুয়ে থাকা কুখ্যাত গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রকে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি চালায়। মূল শুটার ছিল তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশা। ঘটনাস্থলেই হাসপাতালের বেডে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় চন্দন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় কেবিনে থাকা অ্যাটেন্ড্যান্ট দুর্গেশ কুমারও গুলিবিদ্ধ হন। তদন্তে নেমে বাদশার চার সঙ্গীর নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ—আকিব মালিক, সোনু, কালু ওরফে মুস্তাকিম এবং ভিন্ডি ওরফে বলবন্ত সিং। এরা ফুলওয়ারি শরিফ ও বক্সার এলাকার বাসিন্দা। তাদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালায় পাটনা পুলিশ। অভিযান চালায় এসটিএফ ও পাটনা পুলিশের যৌথ দল।
পাটনা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তৌসিফ রাজার বাড়ি ফুলওয়ারি শরিফের গুলিস্তান কলোনিতে হলেও, সে আসলে বক্সারের বাসিন্দা। বর্তমানে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চলতি বছরের রমজান মাসে ফুলওয়ারি শরিফের দুর্গা মন্দির এলাকায় হওয়া একটি শুটআউটের সঙ্গেও তার নাম জড়িয়েছে।
পুলিশ জানায়, তৌসিফ পাটনার একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছে। তার মা একজন শিক্ষিকা এবং বাবা একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু স্কুল পেরোনোর পরই সে অপরাধজগতে পা রাখে। সবসময় আলোচনায় থাকতে চাইত সে। অল্প সময়ের মধ্যে পরিচিতি পাওয়ার লোভেই অপরাধের পথ বেছে নেয়। প্রথমে সুপারি কিলিংয়ের কাজ শুরু করে তৌসিফ। পরে ধীরে ধীরে গড়ে তোলে নিজের একটি গ্যাং। মূলত অল্পবয়সি ছেলেদের দলে টানত সে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। টাকার বিনিময়ে খুন করা ও খুনের নানা প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করাই ছিল তার মূল কাজ।
বিহার পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, পাটনার সগুনা মোড় এবং ভোজপুরের এক সোনার দোকানে হওয়া ডাকাতির ঘটনায় নিহত চন্দন মিশ্রের গ্যাং জড়িত ছিল। পুলিশের কাছে গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল চন্দন—এই বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিতেই তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক অনুমান। চন্দনের বিরুদ্ধে একাধিক খুনের মামলা ছিল। এক ব্যবসায়ীকে খুনের দায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল এবং সে বেউর জেলে বন্দি ছিল। কিন্তু লিভারের সমস্যার কারণে প্যারোলে ছাড়া পেয়ে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। তার প্যারোলের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৮ জুলাই।
চন্দন মিশ্র হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যে দুটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। একটি মামলা করা হয়েছে চন্দনের বাবা মন্টু মিশ্রের অভিযোগের ভিত্তিতে—যা শাস্ত্রীনগর থানায় রুজু হয়েছে। ওই মামলায় বলবন্ত, মনু এবং তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশার নাম রয়েছে। দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের হয়েছে গুলিবিদ্ধ অ্যাটেন্ড্যান্ট দুর্গেশ কুমারের অভিযোগের ভিত্তিতে।