Patna Shooting Arrest : পাটনা গুলি কাণ্ডে ধৃত নিশুর বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি! কী বললেন ক্যামেরার সামনে?

21

ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ জুলাই : পাটনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কুখ্যাত দুষ্কৃতী চন্দন মিশ্রকে খুনের ছক তৈরি হয়েছিল তার নিজের বাড়িতে—এমনই দাবি করেছে বিহার পুলিশ। তাদের মতে, খুনের ব্লুপ্রিন্ট আগে থেকেই সাজানো ছিল এবং পরিকল্পনা অনুযায়ীই হামলা চালানো হয়। তবে পুলিশের এই দাবি একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন খুনের মূলচক্রী তৌসিফের দাদা নিশু খান (Patna Shooting Arrest)। আলিপুর আদালতের বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে শয্যাশায়ী নিশু বলেন, “এই পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। যা বলা হচ্ছে, সব ভুয়ো।” তবে চন্দন মিশ্র খুনের পর রাঁচি হয়ে কলকাতায় কীভাবে চার অভিযুক্ত পালিয়ে আসে, সেই পথ ও বিস্তারিত তথ্য নিশু খান নিজেই প্রকাশ করেন, যা তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

কয়েক বছর আগে জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে নিশুকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। সেই হামলার পর থেকেই শয্যাশায়ী তিনি। ওই ঘটনার সময় তাঁর ভাই তৌসিফ ছিলেন বেউড় জেলে, যেখানে একই সঙ্গে বন্দি ছিলেন আরেক কুখ্যাত দুষ্কৃতী শেরু। জেলবন্দি অবস্থায় তৌসিফ ও শেরুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শেরুই পরে তৌসিফের জামিনের জন্য আর্থিক সাহায্য করে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেও তৌসিফ ও শেরুর যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। এদিকে, ভাই নিশুর শারীরিক অবস্থার কারণে চব্বিশ ঘণ্টা তাঁর দেখভাল করতে শুরু করে তৌসিফ।

অন্যদিকে, শেরুর সঙ্গে তীব্র শত্রুতা তৈরি হয় চন্দন মিশ্রর। বিহার পুলিশের দাবি, সেই ‘চরম শত্রু’ চন্দনকে খুন করার জন্য তৌসিফ ও তার গ্যাংকে সুপারি দেয় শেরু। এরপরেই নিশুর বাড়িতেই বসে চন্দন মিশ্র খুনের পরিকল্পনা করা হয় বলে পুলিশের অভিযোগ। তবে পুলিশের এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন নিশু খান। তাঁর দাবি, খুনের কোনও ছক তাঁর বাড়িতে তৈরি হয়নি, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ।

চন্দন মিশ্র খুনের ঘটনায় এক মহিলা-সহ চার অভিযুক্তকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কীভাবে তারা কলকাতায় পৌঁছেছিল, সেই প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন শয্যাশায়ী নিশু খান। আলিপুর আদালতের সামনে বসেই তিনি জানান, গত শুক্রবার তাঁর নিজের গাড়িতে করে রাঁচি হয়ে কলকাতায় আসে অভিযুক্তরা। গাড়ি চালাচ্ছিল নিশুর ভাই তৌসিফ। প্রথমে তারা যায় পার্ক স্ট্রিটে একটি হোটেলে। কিন্তু সেখানে জায়গা না পাওয়ায় পরে চলে যায় আনন্দপুর এলাকার এক গেস্টহাউসে। সেখানেই ওঠেন নিশু খান, তাঁর বান্ধবী, ভাই তৌসিফ এবং তৌসিফকে সহায়তা করা এক যুবক। এই তথ্য তদন্তে নতুন মোড় এনে দিয়েছে এবং কলকাতায় পালানোর রুট ও আশ্রয়স্থল নিয়ে আরও খোঁজখবর শুরু করেছে পুলিশ।

নিশু খান জানায়, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়, যিনি উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটির বাসিন্দা। এরপর দমদমে গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা করে সে। সেখান থেকে তারা আনন্দপুরের একটি গেস্টহাউসে চলে যায়।

তবে কলকাতায় এটাই নিশুর প্রথম সফর নয়। তার দাবি, এর আগেও ২০২১ সালে বোনের বিয়ের সময় ভাই তৌসিফকে সঙ্গে নিয়ে সে কলকাতায় এসেছিল। চন্দন মিশ্র খুনের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে নিশু জানায়, ঘটনার সময় সে পাটনার হাসপাতালে ছিল না। বরং তার দাবি, পুরো ঘটনার বিষয়ে সব তথ্য তৌসিফের কাছেই রয়েছে। এমনকি খুনের পর ভাই তৌসিফকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল সে, কিন্তু তৌসিফ সেই উপদেশে কর্ণপাত করেনি। চন্দন খুনের পরে তৌসিফ ও তার সঙ্গীরা কলকাতায় এসে গা-ঢাকা দিয়েছিল, তবে শেষরক্ষা হয়নি। কলকাতা থেকেই ধৃতদের গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার অভিযুক্তদের আলিপুর আদালতে তোলা হয় এবং ট্রানজিট রিমান্ডে তাদের বিহারে নিয়ে যাওয়া হয়।