কসবায় বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হালকা বলপ্রয়োগের কথা স্বীকার কলকাতা পুলিশের
কলকাতা, ৯ই এপ্রিল, ২০২৫: কসবার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (ডিআই) অফিসের সামনে কর্মচ্যুত শিক্ষকদের বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। কলকাতা পুলিশ আজ এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হালকা লাঠিচার্জ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গতকাল রাজ্যের বিভিন্ন জেলার কর্মচ্যুত শিক্ষকরা তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে কসবার ডিআই অফিসের সামনেও বহু শিক্ষক ও শিক্ষিকা জড়ো হন। বিক্ষোভকারীরা অফিসের গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
আজ কলকাতা পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, বিক্ষোভকারীরা যখন আইন অমান্য করে অফিসের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ বাধ্য হয়ে হালকা লাঠিচার্জ করে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং কোনো প্রকার গুরুতর আঘাত ঘটানো তাদের উদ্দেশ্য ছিল না।
তবে, পুলিশের এই বিবৃতির পরেও প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কী পরিস্থিতিতে লাঠিচার্জের মতো পদক্ষেপ নিতে হলো? বিক্ষোভকারীরা ঠিক কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি ব্যবহার করা অপরিহার্য ছিল? অনেক শিক্ষক ও বিক্ষোভকারী অভিযোগ করেছেন যে পুলিশ অকারণে তাদের উপর বলপ্রয়োগ করেছে এবং লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
যদিও পুলিশ হালকা লাঠিচার্জের কথা বলছে, তবে ঘটনাস্থলের কিছু ছবি ও ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুলিশের লাঠির আঘাতে কয়েকজন শিক্ষক মাটিতে পড়ে যান। আহত শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে, ঠিক কতজন শিক্ষক এই ঘটনায় আহত হয়েছেন, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার পর শিক্ষক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন পুলিশের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অভিযোগ জানানোর অধিকার শিক্ষকদের রয়েছে এবং পুলিশের এই ধরনের বলপ্রয়োগ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
অন্যদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের গেট ভাঙার চেষ্টা এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা পুলিশের কর্তব্য ছিল এবং সেই কারণেই ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলি রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সরকার শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি শুনতে রাজি নয় এবং দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে আন্দোলন স্তব্ধ করতে চাইছে।
তবে, শাসক দলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মনে করা হচ্ছে, সরকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানাবে।
কসবার ডিআই অফিসের ঘটনা ফের একবার রাজ্যের কর্মচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন এবং সরকারের ভূমিকার উপর প্রশ্ন তুলে দিল। পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় আহত শিক্ষকদের শারীরিক অবস্থা এবং এই ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেদিকেই এখন সকলের নজর।
(Police lathicharge on teachers) (Kasba DI office incident) (West Bengal teacher protest) (Kolkata police news) (Law and order in West Bengal) (Teacher recruitment scam protest)
Comments are closed.