Prajwal Revanna Rape Case : ধর্ষণ মামলায় দেবেগৌড়ার নাতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড?

55

ডিজিটাল ডেস্ক, ২ অগাস্ট : ধর্ষণ মামলায় প্রাক্তন জেডিএস সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্নাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত (Prajwal Revanna Rape Case)। বৃহস্পতিবারই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এবার ঘোষণা হল সাজাও। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি. দেবেগৌড়ার নাতির বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল মাত্র ১৪ মাস আগে। তার মধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করে দ্রুত সাজা ঘোষণা করল জনপ্রতিনিধিদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ আদালত।

পিটিআই জানিয়েছে, তাঁকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত।

কর্নাটকের হাসান জেলার একটি খামারবাড়িতে এক পরিচারিকাকে আটকে রেখে বারবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সেই সময়ের ছবি ও ভিডিও তুলে পরে নির্যাতিতাকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনার তদন্তে নামে কর্নাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT), যারা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রজ্বলের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। SIT-এর পেশ করা তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে শুক্রবার বেঙ্গালুরুর অতিরিক্ত নগর দায়রা আদালতের বিচারক সন্তোষ গজানম ভাট প্রজ্বলকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

শনিবার সাজা ঘোষণার আগে আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্না। তাঁর বক্তব্য, “আমার একমাত্র দোষ— রাজনীতিতে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া।” সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালতের কাছে তুলনামূলক হালকা শাস্তির আবেদনও জানান তিনি। বিচারকের সামনে রেভান্না বলেন, “ওরা বলছে আমি একাধিক মহিলাকে ধর্ষণ করেছি। কিন্তু তাঁদের কেউই স্বেচ্ছায় অভিযোগ জানাতে আসেননি। নির্বাচনের মাত্র ছয় দিন আগে হঠাৎ এই অভিযোগ তোলা হয়। তাঁদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করাতে বাধ্য করা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে হাসন কেন্দ্র থেকে জেডি (এস)-এর প্রার্থী ছিলেন প্রজ্জ্বল রেভান্না। কিন্তু ভোটের আগেই এক পেনড্রাইভ প্রকাশ্যে আসে, যেখানে রেভান্নার বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হেনস্থার ভিডিও থাকার অভিযোগ ওঠে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে জনতা দল (সেক্যুলার)। সাজা ঘোষণার আগে আদালতে আবেগঘন সুরে রেভান্না বলেন, “আমার একটি পরিবার আছে। গত ছ’মাসে মা-বাবার সঙ্গেও দেখা হয়নি। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাকে হালকা শাস্তি দিন। জীবনে আমার একমাত্র অপরাধ— রাজনীতিতে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া।”

তদন্ত শুরু হওয়ার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রজ্জ্বল রেভান্না। তিনি আদৌ দেশে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ছিল অনিশ্চয়তা। এমনকি দু’বার বিমানের টিকিট কাটলেও, শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে দেন। তবে আগাম জামিনের আবেদন জানানোয় স্পষ্ট হয়ে যায়, এবার তিনি দেশে ফিরতে চলেছেন। এরপর এক গভীর রাতে কর্নাটকের কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দরে পৌঁছন রেভান্না। সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করে তিনজন মহিলা পুলিশকর্মীর একটি দল। এরপর ৩১ মে, তাঁকে ইডির হেফাজতে নেয়। সেই থেকেই শুরু হয় আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী পর্ব।

এই মামলায় নির্যাতিতা একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে একটি শাড়ি আদালতে জমা দেন, যা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য বহন করে। ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণ মেলে, সেই শাড়িতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়ার নাতি প্রজ্জ্বল রেভান্নার বীর্যের উপস্থিতি রয়েছে। এটিকেই মামলার মূল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে আদালত। মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সাত মাসের মধ্যে দ্রুত বিচারপর্ব সম্পন্ন হয়, যেখানে মোট ২৩ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়।