SILCHAR: কটনের অধ্যাপকের এক মন্তব্যে তোলপাড় শিলচর

179

SILCHAR: কটনের অধ্যাপক প্রশান্ত চক্রবর্তীর এক মন্তব্যে তোলপাড় শিলচর। শুরু হয়েছে বরাক-ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা। সেতুবন্ধনের যে উদ্দেশ্য নিয়ে বরাকে গিয়েছিলেন অসম সাহিত্য সভার প্রতিনিধিরা, সেই উদ্দেশ্যকেই গলা টিপে মারার চেষ্টা শিলচরের গুটিকয়েক লোকের। শুরু হয়েছে, বরাকের মানুষকে বিষিয়ে তোলার চেষ্টা।

১৯মের প্রাক্কালে বরাকে গিয়েছিলেন অসম সাহিত্য সভার এক প্রতিনিধি দল। শহিদ তীর্থ বরাকে দাঁড়িয়ে, ভাষা শহিদদের স্বীকৃতি দিয়েছিল অসম সাহিত্য সভা। শিলচর ভাষা শহিদ রেল স্টেশনের দাবিতেও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন, অসম সাহিত্য সভার সভাপতি ডঃ বসন্ত গোস্বামী। সেই ঘোষণা ছিল ঐতিহাসিক।

সফল সেতুবন্ধন কর্মসূচি দেখে শঙ্কিত হয়ে যান শিলচরের জনাকয়েক বুদ্ধিজীবী। অসমীয়া আগ্রাসনের জুজু দেখিয়ে যারা অসমের বাঙালি সমাজের ত্রাতা হিসেবে নিজেকে জাহির করেন, তাঁরাই শঙ্কিত হন।

কারণ, বরাক-ব্রহ্মপুত্রের মিলন হলে তাঁদের গণেশ উল্টে যাবে। তাই কটনের অধ্যাপক প্রশান্ত চক্রবর্তীর একটি মন্তব্য নিয়ে শুরু হয় এই বুদ্ধিজীবীদের আক্রমণ। অভিযোগ, প্রশান্ত চক্রবর্তী নাকি বলেছেন, ‘আসাম বিশ্ববিদ্যায় অসম আন্দোলনের ফসল’। আর তা নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে তুমুল তরজা। সামাজিক মাধ্যমে বইছে আবেগের বন্যা।

কিন্তু প্রশ্ন হল, সত্যি সত্যি কি এমনটা বলেছিলেন প্রশান্ত চক্রবর্তী? আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের দেওয়া ভাষণের সম্পূর্ণ অংশ শুনলেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি কখনও বলেননি, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অসম আন্দোলনের ফসল। তিনি বলেছিলেন, অসম চুক্তি বাস্তবায়নের সময়ের কথা। আর তাঁর সেই মন্তব্যকে বিকৃত করে একাংশ লোক যে চরম উন্মাদনতা সৃষ্টি করছেন, তাতে চাপা পড়ে যাচ্ছে সেই সেতুবন্ধনের মহৎ উদ্দেশ্য।

অসম আন্দোলন, বরাকের ভাষা আন্দোলনে দুই উপত্যকার মধ্যে যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, গত দু-দশকে তা বহুলাংশে লাঘব হয়েছে। পরিবর্তনশীল সময়ের আহ্বানে অধ্যাপক প্রশান্ত চক্রবর্তীর উদ্যোগেই বরাকে ছুটে গিয়েছিলেন অসম সাহিত্য সভার সভাপতি সহ কুড়িজনের প্রতিনিধি দল।

প্রশান্ত চক্রবর্তীর জন্যই তাঁরা ভাষা শহিদদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। যা বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার আত্মিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক বিরল নিদর্শনও বটে।

কিন্তু ভাষা শহিদদের আবেগ ফেরিওয়ালাদের বিষয়টি হজম হল না। ব্যক্তিগতভাবে শুরু হয়েছে প্রশান্ত চক্রবর্তীকে আক্রমণ। যে লোকটা দু-লাইন বাংলা শুদ্ধভাবে লিখতে পারে না, সেই লোকও আওয়াজ তুলেছে সমাজ মাধ্যমে।

প্রশ্ন হয়, প্রশান্ত চক্রবর্তী যা বলেছেন সরকারি নথির উদ্ধৃতি দিয়েই বলেছেন। আর তা যদি ভুল হয়, তা হলে সেই সরকারি নথি সংশোধনের আওয়াজ কেন উঠছে না? এই বিষয়টি নিয়ে মৌন কেন বরাকের বাঙালি সমাজের তথাকথিত ঠিকাদাররা?