ডিজিটাল ডেস্ক, ১০ জুন : সাধারণ মানুষের স্বার্থে ফের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গৃহস্থ বাড়িতে আধুনিক প্রযুক্তির স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক জেলার জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপিত হয়, যেখানে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিতভাবে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। এরপরই সোমবার রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, গৃহস্থ বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো আপাতত বন্ধ রাখা হবে। তবে গত কয়েক মাসে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম সফলভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস এবং টেলি কমিউনিকেশন টাওয়ারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্মার্ট মিটার স্থাপন করেছে (Smart Meter West Bengal)।
বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লি ও মুম্বই-সহ একাধিক মহানগরের মতো সর্বত্র আধুনিক প্রযুক্তির স্মার্ট মিটার চালু হলে বিদ্যুতের খরচ অনেকটাই কমবে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। এই কারণেই রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দফতর পরীক্ষামূলকভাবে তিন-চারটি জেলায় গৃহস্থ বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে, একাধিক এলাকায় এই মিটার নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সোমবার রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে আপাতত গৃহস্থের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখা হবে।
স্মার্ট মিটার চালু হলে রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা একাধিক বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি প্রিপেড মোবাইল রিচার্জের মতোই সহজ ও সুবিধাজনক, যা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ দেবে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মিটারের সিকিউরিটি ডিপোজিটের অর্থ স্মার্ট মিটারে শুরুতেই ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, যদি প্রিপেড ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়, তা হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হবে না। বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের শীর্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, গ্রাহকরা আরও ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে বেশি বিল আসবে বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা ভ্রান্ত ও অবৈজ্ঞানিক বলে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন।
দক্ষিণবঙ্গের দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান, বাঁকুড়া সহ কয়েকটি জেলার নির্দিষ্ট কিছু জোনে গৃহস্থ বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছিল। তবে এই উদ্যোগ ঘিরে একাধিক ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার দফতরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে রাজ্য সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং আপাতত গৃহস্থদের জন্য স্মার্ট মিটার স্থাপনে বিরতি ঘোষণা করে। বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, স্মার্ট মিটার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল বিলিং প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুল ও স্বচ্ছ করা, যা গ্রাহকদের সঠিক বিদ্যুৎ খরচ নির্ধারণে সহায়তা করবে।
স্মার্ট মিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা মোবাইল সেটিংয়ের মতোই নিজেরাই সেটিং নির্ধারণ করতে পারবেন। এর ফলে প্রতি আধ ঘণ্টা থেকে শুরু করে দৈনিক বিদ্যুৎ খরচের হিসাব মেসেজের মাধ্যমে পেতে সুবিধা হবে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাটি হল, স্মার্ট মিটারের সঙ্গে একটি ইন-হাউস ডিসপ্লে মনিটর বোর্ড থাকবে, যা প্রতিদিনের শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ সরাসরি দেখাবে। তৃতীয়ত, গ্রাহক যদি বাড়িতে না থাকেন, তাহলে মোবাইলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে পারবেন। এতে একদিকে ফাঁকা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত দুর্ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব হবে, পাশাপাশি কেউ গৃহস্থহীন বাড়ির বিদ্যুৎ চুরি করতে পারবে না। এভাবে স্মার্ট মিটার বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।