ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ জুলাই : আজ, বুধবার বিকেলে ফের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নজির গড়ল ভারত। প্রথমবারের জন্য ভারত ও আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে নির্মিত উপগ্রহ নিসার (NISAR satellite)-এর সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হল। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে শ্রীহরিকোটা থেকে কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে এই অত্যাধুনিক উপগ্রহ (Successful Launch Of NISAR satellite)।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) এবং মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA) যৌথভাবে এই উপগ্রহটি তৈরি করেছে। নিসারের প্রধান উদ্দেশ্য হল, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ, তুষারাবৃত অঞ্চল এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা, বিশ্লেষণ করা এবং সেই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণায় সহায়তা করা।
নিসার নামটি এসেছে নাসা ও ইসরো—দুই মহাকাশ গবেষণা সংস্থার যৌথ নামের সংযোজন থেকে। এর পূর্ণ নাম নাসা-ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার স্যাটেলাইট। ভারত ও আমেরিকার মহাকাশ গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে এই প্রকল্প এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দুই দেশের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের যৌথ পরিশ্রম, প্রযুক্তি আদান-প্রদান এবং সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সমন্বয়ের ফলেই নিসার উপগ্রহের জন্ম হয়েছে। এটি ভবিষ্যতের গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে এক নতুন দিশা দেখাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিসার উপগ্রহ পৃথিবীকে এমন একটি কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে, যাকে বলা হয় সান-সিনক্রোনাস কক্ষপথ। এই কক্ষপথে উপগ্রহটি প্রতিদিন একই সময় পৃথিবীর নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের উপর দিয়ে দুই মেরুর খুব কাছ ঘেঁষে (প্রায় ৯০ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানে) অতিক্রম করবে। ফলে দিনের আলোর এক নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠের তুলনামূলক চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে।
এই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ২৯ জুলাই দুপুর ২টা ১০ মিনিট থেকে, যার পর থেকে সময় গুনতে শুরু করেছে উৎক্ষেপণ ঘড়ি। নিসার অভিযানে একাধিক ধাপ রয়েছে—উৎক্ষেপণ, মহাকাশে প্রেরণ, কক্ষপথে স্থির অবস্থান নির্ধারণ এবং বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ শুরু।
জিএসএলভি-এফ১৬ (GSLV-F16) রকেটের মাধ্যমে নিসার উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। এটি একটি ৫১.৭ মিটার দীর্ঘ ত্রিস্তরীয় রকেট। উপগ্রহটির ওজন ২,৩৯৩ কেজি এবং এটি অন্তত ৫ বছর কাজ করবে।
নিসার উৎক্ষেপিত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে, ৫টা ৪০ মিনিটে।
ইসরো জানিয়েছে, নিসারের মূল লক্ষ্য হল : ভূমির ক্ষয় ও ভূমিচ্যুতি বিশ্লেষণ
তুষার গলনের গতি পর্যবেক্ষণ
জমির বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন
ভারত ও আমেরিকার যৌথ আগ্রহের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের বিশ্লেষণ
বনাঞ্চলের মরশুমি রূপান্তর, হিমবাহের গতি ও পর্বতের পরিবর্তনের তথ্য সংগ্রহ
এছাড়াও, এই উপগ্রহ উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চল এবং হিমালয়ের গ্লেসিয়ার সম্পর্কে তথ্য ও চিত্র পাঠাবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।