The Bengal Files Controversy : ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এর ট্রেলর লঞ্চ ঘিরে কলকাতার হোটেলে ধুন্ধুমার!

58

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৬ অগাস্ট : ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’-এর প্রচার নিয়ে জটিলতা, পাঁচতারা হোটেলে বন্ধ হয়ে গেল ঝলক প্রদর্শন (The Bengal Files Controversy)। বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত আসন্ন ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’-এর প্রচার অনুষ্ঠান ঘিরে তৈরি হল জটিলতা। শনিবার কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে ছবির প্রোমো ক্লিপ প্রদর্শনের কথা ছিল।

কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, ছবির ওই ঝলক আর দেখানো যাবে না। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কোনও কারণ জানানো হয়নি হোটেলের পক্ষ থেকে। আয়োজকদের পক্ষেও পরিস্থিতি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে ছবির ঝলক প্রদর্শন বন্ধ হওয়ায় অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক এবং প্রশ্ন উঠছে দর্শকদের মধ্যে।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে তা বাতিল করা হলে পরে ঠিক হয় বাইপাসের একটি পাঁচতারা হোটেলে ছবির ট্রেলার লঞ্চ হবে শনিবার। সেই মতো সব ঠিক থাকলেও এদিন ট্রেলার চলাকালীনই হঠাৎ বেঁকে বসে হোটেল কর্তৃপক্ষ। বিবেকের দাবি, তিনি স্টেজে থাকাকালীন হোটেল কর্তৃপক্ষ এসে বলে, এখানে ট্রেলার লঞ্চ করা যাবে না। তাঁর অভিযোগ, এর পেছনেও রাজ্য সরকারের চাপ রয়েছে। যে কারণে এই চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী অভিযোগ করেন, পুরো ঘটনা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। তাঁর দাবি, যখন স্টেজে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ ছবির ট্রেলার চলছিল, তখন আচমকাই তার কেটে দেওয়া হয়। চলতে চলতেই ট্রেলারটি মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। অন্যদিকে, হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন কোনও ইচ্ছাকৃত কাজ তারা করেনি। তারা শুধুমাত্র আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিল। হোটেল সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, অনুষ্ঠান আয়োজনে কলকাতা পুরসভার কোনও অনুমতি ছিল না—এই কারণেই অনুষ্ঠানটি আটকে দেওয়া হয়। ঘটনাকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে। পরিচালকের অভিযোগ ও হোটেল কর্তৃপক্ষের অবস্থান একে অপরের বিপরীত হওয়ায়, প্রশ্ন উঠছে আসল কারণ নিয়ে।

নির্ধারিত ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় আবারও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। শুক্রবার এক্স-এ একটি ভিডিও শেয়ার করে তিনি জানান, কলকাতায় অনুষ্ঠানের আগের দিনই একটি প্রথম সারির সিনেমা হল চেইন হঠাৎ করে ট্রেলার লঞ্চ বাতিল করে দেয়। বিবেক বলেন, “আমাদের কাছে সমস্ত লিখিত অনুমতি ছিল। সেই অনুযায়ী পুরো টিম কলকাতায় পৌঁছেছিল। কিন্তু এখন জানানো হয়েছে যে অনুষ্ঠানটি আর হবে না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “থিয়েটার চেইনটি ‘রাজনৈতিক চাপ’-এর কারণে অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। তারা কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা চায় না।” এই ঘটনার পর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে শনিবার বাইপাসের একটি পাঁচতারা হোটেলে ট্রেলার লঞ্চ করা হবে। কিন্তু সেখানেও ছবির নির্মাতারা বাধার মুখে পড়েন।

ট্রেলারে ঠিক কী তুলে ধরা হয়েছে? পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী অবিভক্ত বাংলার সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাগুলিকে কেন্দ্র করে দেখাতে চেয়েছেন কীভাবে সেই সময়কার উত্তাল পরিস্থিতি দিল্লির রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। কলকাতার প্রেক্ষাপটে, পড়ন্ত বিকেলের গঙ্গার জলে সূর্যের ঝলক, হাওড়া ব্রিজের ছায়া—সব মিলিয়ে সিনেম্যাটিক ফ্রেমে ফুটে উঠেছে দেশভাগের করুণ অধ্যায়।

ট্রেলারে উঠে এসেছে জিন্নাহর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ষড়যন্ত্র, মেরুকরণের খেলা এবং ধর্মীয় উন্মাদনার ফলে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির নির্মম চিত্র। যদিও ছবির প্রেক্ষাপট ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট, তবুও ট্রেলারের একাধিক সংলাপে সাম্প্রদায়িক বিভাজন উসকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ট্রেলার লঞ্চ ঘিরে বাধার প্রসঙ্গে বিবেক বলেন, “সত্যজিৎ রায়ের শহরে দাঁড়িয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, তা কখনও ভাবিনি।” ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যিনি অভিনয় করেছেন গোপাল পাঁঠার ভূমিকায় সৌরভ দাস। গান্ধীজির চরিত্রে দেখা গেছে অনুপম খেরকে, এবং এক সন্ন্যাসিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পল্লবী যোশি।

বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘ফাইলস’ ট্রিলজির তৃতীয় রাজনৈতিক থ্রিলার হিসেবে আসছে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’। এর আগে ‘তাসখন্দ ফাইলস’ এবং ‘কাশ্মীর ফাইলস’-এর পর এবার বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছবি নির্মাণে হাত দিয়েছেন পরিচালক। গত বছর অক্টোবর মাসে ছবির প্রথম ঝলক প্রকাশ্যে এনে তিনি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তখন ছবির নাম ছিল ‘দ্য দিল্লি ফাইলস’, যদিও সাব-টাইটেলে উল্লেখ ছিল ‘দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’।

পরবর্তীতে, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক আবহকে ঘিরে বিবেক ছবির নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’। জুন মাসে প্রকাশিত ছবির একটি দৃশ্যপট-ভিত্তিক কোলাজে এমন কিছু মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছিল, যা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—ছবির নাম বদলের পেছনে কি কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে?