TMC BJP Social Media War : তৃণমূলকে বিঁধলেন মোদী, পাল্টা পরিযায়ী পাখিকে পদ্ম উত্তরীয় কটাক্ষ তৃণমূলের

9

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৮ মে : বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে জোড়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘সিঁদুর অভিযান’-এর পর এটি তাঁর প্রথম পশ্চিমবঙ্গ সফর, যা বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগের প্রথম সফরও বটে। এই সফরের ২৪ ঘণ্টা আগে, ‘এক্স’ হ্যান্ডলে পোস্ট করে তৃণমূলের দুর্নীতি ও প্রশাসন নিয়ে সমালোচনা করেছেন মোদী। তৃণমূলও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে প্রস্তুতি শুরু করেছিল বুধবার দুপুর থেকেই (TMC BJP Social Media War)। তবে, প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের পর আর অপেক্ষা না করে, পরিযায়ী পাখির ছবি দিয়ে সর্বভারতীয় তৃণমূলের ‘এক্স’ হ্যান্ডল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে—কেন বাংলার ন্যায্য পাওনা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে?

আলিপুরদুয়ারের জনসভার সুর আগেই বেঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার বিকেলে নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে তিনি পোস্ট করে জানান, “আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে আমি আলিপুরদুয়ারে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির জনসভায় ভাষণ দেব।” তিনি উল্লেখ করেন, “গত এক দশকে এনডিএ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের মানুষের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।” তবে, পরবর্তী বাক্যে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “তাঁরা (পশ্চিমবঙ্গের মানুষ) তৃণমূলের দুর্নীতি এবং অপশাসনে ক্লান্ত।

কালক্ষেপ না-করে তৃণমূল তাদের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পোস্টে লেখা হয়েছে, “যেহেতু পরিযায়ী পাখিরা বাংলায় তাদের মরসুমি ভ্রমণ শুরু করেছে, তাই কেন এই সহজ প্রশ্নের জবাব দেওয়া হবে না—কেন্দ্রীয় সরকার কেন রাজ্যের ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা ন্যায্য পাওনা আটকে রেখেছে?” পোস্টে ইংরেজি অক্ষরে ‘হ্যাশট্যাগ’ দিয়ে লেখা হয়েছে—‘আয়ে হো তো বতাকে যাও’ (এসেছেন যখন, বলে যান)।এছাড়া, তৃণমূলের তরফে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে একটি পরিযায়ী পাখির গলায় গেরুয়া উত্তরীয়, যাতে বিজেপির প্রতীক পদ্মফুল আঁকা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের পর রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠকে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলছেন দেশের প্রশ্নে সবাই এক, এবং আমাদের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে বক্তৃতায় নজর কাড়ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য আসলে কুয়োর ব্যাঙের রাজনীতি।” এছাড়া, তিনি স্পষ্ট জানান, “রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করা হলে, প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত থাকবে তৃণমূল।”

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমে প্রশাসনিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। তিনি আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার জন্য ১০১০ কোটি টাকার ‘নগর গ্যাস সরবরাহ’ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এরপর তিনি রাজনৈতিক সভার মঞ্চে উপস্থিত হবেন। ‘সিঁদুর অভিযান’-এর পর সন্ত্রাসবাদ ও ভারতের আপসহীন অবস্থানের বার্তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সভা করছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে, অনেকে ধারণা করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গের সভাও সেই সুরেই বাঁধা থাকবে। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে ভারতের ‘রাজনৈতিক ঐক্যের’ ছবি তুলে ধরা হচ্ছে। তবে, বুধবার মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলকে আক্রমণ করবেন না—এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।

ভারত-পাক সংঘাত, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা বা ‘সিঁদুর অভিযান’ নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব মোদী সরকার বা বিজেপিকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। তবে, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকেও অংশ নেননি। রাজ্য বিজেপির একাংশের ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক মহলের সামনে ‘ঐক্য’ তুলে ধরলেও, ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদীকে আক্রমণ করা তৃণমূল বহাল রেখেছে। ফলে, পশ্চিমবঙ্গে এসে তৃণমূল বা মমতাকে আক্রমণ না-করার কোনও ‘বাধ্যবাধকতা’ মোদীর নেই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী বলতে পারেন, তা আগাম আন্দাজ করে বুধবার দুপুরে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বক্তৃতার অংশ প্রকাশ করা হয়। সেখানে মমতাকে আলিপুরদুয়ারে হাসপাতাল, রাস্তা সংস্কার, জয়ন্তী-বক্সার উন্নয়ন-সহ একাধিক খাতে রাজ্য সরকারের ব্যয় উল্লেখ করতে শোনা যায়। এই প্রসঙ্গে আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, “আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারের মানুষের জন্য সত্যিই কিছু ইতিবাচক ঘোষণা করবেন।” তিনি অভিযোগ করেন, “এর আগে তিনি বলেছিলেন ডানকানের সব চা-বাগান খুলে দেবেন, কিন্তু তা হয়নি। বলেছিলেন, চা শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করবেন, কিন্তু সেটাও বাস্তবায়িত হয়নি।” প্রকাশ আরও জানান, “প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে কী বলেন, তা দেখে নিয়েই জেলা তৃণমূল পরবর্তী কর্মসূচির পরিকল্পনা করবে।”

তৃণমূলের অন্দরে ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ‘সিঁদুর অভিযান’ বা এসএসসি নিয়ে কোনও স্তরের কোনও নেতা সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলবেন না। এদিকে, সন্ত্রাসবাদের নেপথ্যে পাকিস্তানের ভূমিকা এবং ‘সিঁদুর অভিযান’-এর প্রসঙ্গ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে ভারত থেকে সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে। এই দলে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি ইন্দোনেশিয়ায় ছিলেন, এবং জাপান, মালয়েশিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, “আমি বিরোধী দলের প্রতিনিধি। কিন্তু দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।” তৃণমূল অভিষেকের এই বক্তব্যকে সামনে রেখে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করতে চাইছে। তারা দেখাতে চাইছে যে, দেশের স্বার্থে তৃণমূল রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারলেও, কেন্দ্রীয় সরকার সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে বাংলার ন্যায্য অর্থ আটকে রেখেছে। এই বিষয়টি কুণাল ঘোষের বক্তব্য এবং তৃণমূলের ‘এক্স’ হ্যান্ডলের পোস্টেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

জাতীয়তাবাদের আবেগ বিজেপি এককভাবে দখল করতে না-পারে, সেই চেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে তৃণমূল। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের অবস্থান এবং পহেলগাঁও হামলার পর বাংলার শাসকদলের অবস্থানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুলওয়ামার ঘটনায় তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সংযত ছিল, কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পর তারা সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে। এই পরিবর্তন রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments are closed.