Tramp-Mask Relation:প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মাস্কের অম্ল-মধুরে মার্কিন নাগরিকের জীবনযাত্রায় প্রশ্নচিহ্ন

11

ডিজিটাল ডেস্ক ৬ জুনঃএলন মাস্কের কার্যকলাপ হতাশাজনক। বৃহস্পতিবার ঠিক এই ভাষাতেই টেসলা কর্ণধারকে নিশানা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিন কয়েক আগেই ট্রাম্প প্রশাসনের জনকল্যাণমূলক বিলকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বাজে পদক্ষেপ বলে তকমা দিয়েছিলেন মার্কিন ধনকুবের মাস্ক। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফার দায়িত্বগ্রহণের পরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাস্কের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। মাস্কের জন্য আলাদা একটি দপ্তরও তৈরি করেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন মাস্ক। এতদিন এনিয়ে ট্রাম্প সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেননি। কিন্তু, বৃহস্পতিবার ওভালের অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট সাফ বলেন তিনি ইলন মাস্কের ব্যাপারে খুবই হতাশ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে মাস্কের সংস্থার ভর্তুকি বাতিল থেকে শুরু করে সরকারি চুক্তি বাতিল, একের পর এক কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে লোকে টেসলার শেয়ার বিক্রি করে দিতে দুবার ভাবছে না। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির ফলে এক ধাক্কায় মাস্কের সংস্থার শেয়ার পড়ে গিয়েছে। সেদিকে দিয়ে মাস্কও সুর সপ্তমে চড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আক্রমণ করতে পিছ পা হচ্ছে না (Tramp-Mask Relation)।

কিন্তু প্রশ্ন হল ট্রাম্প-মাস্কের সম্পর্কে কেন এই ‘ইউ টার্ন’?গলায়-গলায় বন্ধুত্ব কিভাবে কাদা ছোড়াছুড়িতে গড়াল ? কেমন ছিল তাঁদের ‘ব্রোম্যান্স’-এর শুরুটা? মাস্কের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্ষোভ মূলত তাঁর নীতি-বিষয়ক পদক্ষেপ এবং স্পেসএক্স ও টেসলা কোম্পানির বড় পরিকল্পনা নিয়ে। মাস্ক অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘৭৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টের এই মতামত সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’মাস্কের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের এক পর্যায়ে, ট্রাম্পের অফিস থেকে মাস্কের আনুষ্ঠানিক বিদায়ের অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সময় মাস্ক কালো চশমা পরে উপস্থিত হয়ে অবাক করার মতো কথা বলেছিলেন। মাস্কের বক্তব্য ছিল তাঁর চোখে কালশিটে পড়েছে, ছেলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে, “তবে এই দাগ তাঁর সরকারি কেরিয়ারের বর্তমান পরিস্থিতিরও প্রতীক”। ট্রাম্প আবার বিস্ফোরক দাবি করেন বসেন , “মাস্ক নিজের মতো থাকতে চান এবং কোনও কিছুতেই তাঁর কোনও পরিবর্তন হবে না”।

সম্প্রতি ট্রাম্প মাস্কের সরকারি চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিলে মাস্কও পাল্টা জানিয়ে দেন,তিনি স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’ তৈরি করবেন না। নাসা মহাকাশ সংস্থার নেতৃত্বের জন্য মনোনীত প্রার্থী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও জানান তিনি। ট্রাম্প এই নিয়ে বলেন, ‘মাস্ক এমন কিছু পদক্ষেপ করছেন যেগুলো আমার বিরক্তির কারণ।’ পাশাপাশি, ট্রাম্পের ‘বড়, সুন্দর বিল’যা সরকারের ব্যয় ও কর নীতিকে পরিবর্তন করতে পারে, সেটি ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মাস্ক এই বিলকে ‘জঘন্য’বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের ওই বিলের ফলে এত দিন ধরে ডিওজিই যে কাজ করে এসেছে, তা ব্যর্থ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মাস্ক। পর দিনই ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইস্তফা দেন এই ধনকুবের।

এই তিক্ততার মধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন মাস্ক। দাবি করেন, যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমেরিকায় নতুন একটি রাজনৈতিক দল শুরু করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন মাস্ক। কোনরকম রাখঢাক না করে মাস্ক এ-ও বলছেন যে, ট্রাম্প যে শুল্কনীতি অনুসরণ করছেন, তা অদূর ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেবে। অন্য দিকে, ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাস্কের সংস্থার ভর্তুকি বাতিল করার। তাতে এক দিনের মধ্যে টেসলার শেয়ার পড়ে গিয়েছে ১৪ শতাংশ। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, মাস্কের ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়েছে ৮৭৩ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা)! ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, মাস্ক তাঁর বিপক্ষে গিয়েছেন বলে তিনি চিন্তিত নন। তবে এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল তাঁর। এখণ প্রশ্ন হল মার্কিন প্রশাসন ও ধনকুবের এর মধ্যে এই ফাটল ঠিক কতটা ভোগাবে টাম্পকে , সেটাই দেখার ।