ডিজিটাল ডেস্ক, ১২ অগাস্ট : পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার সমর্থন যে ক্রমেই জোরাল হচ্ছে, তার আরও একটি প্রমাণ মিলল এবার। বালোচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA)-কে ‘বিদেশি জঙ্গি সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করল ওয়াশিংটন। শুধু বিএলএ-ই নয়, তাদের সহযোগী সংগঠন ‘দ্য মাজিদ ব্রিগেড’-কেও জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়েছে (USA Levels BLA As Terror Organization)।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীন বালোচিস্তান গঠনের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বালোচ লিবারেশন আর্মি। তাদের দমন করতে পাকিস্তান সেনার যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। আর এই কঠিন সময়ে, পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির যখন আমেরিকা সফরে, ঠিক তখনই আমেরিকার তরফে বালোচদের বিরুদ্ধে এই কড়া অবস্থান— যা ইসলামাবাদের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনকেই আরও স্পষ্ট করে দিল।
কয়েকদিন আগেই পহেলগাঁও হামলার জন্য দায়ী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)-কে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এই সংগঠনকে দীর্ঘদিন ধরেই পরোক্ষভাবে মদত দিয়ে এসেছে পাকিস্তান, তাই TRF-কে জঙ্গি ঘোষণা করা নিয়ে ইসলামাবাদের অস্বস্তি ছিল স্পষ্ট। এর ঠিক কিছুদিন পরেই আমেরিকা সফরে যান পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। আর সেই সফরের মধ্যেই ওয়াশিংটন জানিয়ে দেয়, এবার থেকে বালোচ স্বাধীনতাকামীদেরও জঙ্গি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ, একপ্রকার কূটনৈতিক বার্তা দিয়ে পাকিস্তানকে সন্তুষ্ট করল আমেরিকা।
প্রসঙ্গত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিতে সম্প্রতি পাকিস্তান-মুখীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলে ওয়াশিংটন। ট্রাম্প জানান, পাকিস্তানে যে তেলের বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে, তা উন্নত করতে আমেরিকা যৌথভাবে কাজ করবে ইসলামাবাদের সঙ্গে। এরই মাঝে পাকিস্তানের উপর শুল্কহার ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। পরপর দু’মাসে দু’বার আমেরিকা সফর করেছেন পাক সেনাপ্রধান। আর এবার পাক সেনার দীর্ঘদিনের ‘শত্রু’ বালোচ আর্মিকেও জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়ে দিল ট্রাম্প প্রশাসন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বালোচিস্তানের জনগণ। পাক সেনার নির্মম দমননীতি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সেখানে গঠিত হয়েছে সশস্ত্র সংগঠন বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA)। এই সংগঠনকে দমন করতে বালোচিস্তান জুড়ে দমন-পীড়নের সব সীমা অতিক্রম করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অথচ, বালোচদের এই স্বাধীনতা আন্দোলনকেই এবার সরাসরি জঙ্গি কার্যকলাপ বলে আখ্যা দিল আমেরিকা। এর পেছনে শুধু পাকিস্তানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নয়, রয়েছে সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক স্বার্থও। কিছুদিন আগেই বালোচিস্তান থেকে অশোধিত তেল সরবরাহ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তিতে পৌঁছেছে আমেরিকা। তাই BLA-কে জঙ্গি তকমা দেওয়ার সিদ্ধান্তে মার্কিন ‘পাক-প্রেমের’ পাশাপাশি তাদের ব্যবসায়িক লাভের হিসাবও স্পষ্ট।