ডিজিটাল ডেস্ক, ২৮ জুলাই : বাংলার আবহাওয়া যেন দুই রকম ছবি আঁকছে—একদিকে দক্ষিণবঙ্গ ভিজছে টানা বৃষ্টিতে, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে বর্ষা যেন মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে যেখানে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই অবস্থায় আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর (Weather Rain Update)।
আবহাওয়া অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, বর্তমানে উত্তর বাংলাদেশের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। সেই সঙ্গে মৌসুমি অক্ষরেখাও পুরুলিয়ার উপর দিয়ে বিস্তৃত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এই দুই সিস্টেমের প্রভাবেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা এখন জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ, সোমবার পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হতে পারে ভারী বৃষ্টি।
মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়ায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বুধবার বৃষ্টির দাপট দেখা দিতে পারে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায়। তবে বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমবে বলে পূর্বাভাস। সে দিন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরবঙ্গে আজ ভারী বৃষ্টি হতে পারে কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায়। মঙ্গলবার সেখানে হবে বিক্ষিপ্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি। বুধবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে।
বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে। শুক্রবার ও শনিবার এই দুর্যোগ আরও বাড়তে পারে। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টি, আর জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
রবিবার উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সর্বোচ্চ প্রভাব দেখা যেতে পারে। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থাকছে। কোচবিহারও এই তালিকা থেকে বাদ যাবে না।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৫০.৪ মিলিমিটার, যেখানে স্বাভাবিক বর্ষার পরিমাণ ৫৫৮.৬ মিলিমিটার। অর্থাৎ, এই সময়ে দক্ষিণবঙ্গে ১৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় বর্ষার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, পাশাপাশি কলকাতা, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনাতেও স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
উল্টোদিকে, উত্তরবঙ্গে এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৬৯৪.৪ মিলিমিটার, যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল ৯৮৯.৭ মিলিমিটার— অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশ ঘাটতি। মালদা বাদ দিলে বাকি কোনও জেলায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়নি। ফলে দক্ষিণবঙ্গ আপাতত পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে স্বস্তিতে থাকলেও, উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। সামনের সপ্তাহে কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও ঘাটতি মেটাতে কতটা সময় লাগবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া দফতর দুই বঙ্গের বাসিন্দাদেরই সতর্ক থাকতে বলেছে।