ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ মে : আগামী তিন দিনের মধ্যে রাজ্যে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর (Weather Update)। এর ফলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে সপ্তাহজুড়ে ঝড়বৃষ্টি চলতে পারে। সমুদ্রও উত্তাল থাকবে, তাই আগামী কয়েক দিনের জন্য মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার মধ্য-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরও কিছুটা অগ্রসর হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। এটি ইতিমধ্যে মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডের স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই মৌসুমি বায়ু উপকূলীয় বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির পাশাপাশি সিকিম হয়ে উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করবে। এ ছাড়া, মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাওয়ার গতি অনুকূল থাকায় বুধবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় টানা কয়েক দিন ভারী ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
রবিবারের পর সোমবারও সকাল থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে ঝড়বৃষ্টি চলবে। বুধবার থেকে দুর্যোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। ওই দিন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি, ওই জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
শুক্রবার দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, হুগলি এবং বীরভূমে ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার বীরভূম ও মুর্শিদাবাদেও দুর্যোগ চলবে।
উত্তরবঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হতে পারে। উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারে ওই দিন ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্র ও শনিবার দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। ওই দুই দিনে উত্তরের অন্যান্য জেলাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার কেরলে নির্ধারিত সময়ের আট দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গেও আগাম বর্ষা প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ হয়ে রাজ্যে বর্ষা প্রবেশ করবে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ফলে বুধবার থেকে সমুদ্র উত্তাল থাকবে বলে জানিয়েছে আলিপুর। মৎস্যজীবীদের জন্য চার দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যাতে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে না যান।
সুন্দরবনের উপকূলজুড়ে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সোমবার সকাল থেকে বকখালি ও গঙ্গাসাগরের মতো এলাকায় মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সমুদ্রসৈকতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পাশাপাশি পানীয় জল ও শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রতিটি ব্লক অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সোমবার সাগর ব্লক অফিসে জরুরি প্রশাসনিক বৈঠকও ডাকা হয়েছে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা।