Weather Update : শহরজুড়ে রাত থেকে টানা বৃষ্টি, বর্ষার দাপট রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে

15

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৮ জুন : কলকাতার আকাশ যেন একটানা বৃষ্টির ছোঁয়ায় আচ্ছন্ন! সকাল থেকে ঘন মেঘের চাদরে ঢাকা শহর, যেখানে অলিগলি থেকে রাজপথ— সর্বত্রই জলমগ্ন। কোথাও হালকা জলে ভিজছে পথ, তো কোথাও হাঁটুজলে ডুবে যাচ্ছে জনজীবন (Weather Update)। অফিস টাইমে প্রবল যানজট শহরের গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে, ছাতা-বর্ষাতি নিয়েও কর্মজীবীরা পৌঁছতে হিমশিম খাচ্ছেন।

শুধু কলকাতা নয়, সমগ্র রাজ্যে এখন মৌসুমী বৃষ্টির দাপট চলছে। মৌসুমী অক্ষরেখা ও নিম্নচাপের সংযুক্ত প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ টানা প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও মেঘের গর্জন, কখনও দমকা হাওয়ার দাপট— প্রকৃতি যেন তার নিজস্ব ছন্দে আন্দোলিত!

কলকাতার আবহাওয়ায় একধাক্কায় বেশ পরিবর্তন এসেছে, তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.৪ ডিগ্রি। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকায় পরিবেশ আরও স্যাঁতসেঁতে। শহরে ইতিমধ্যেই ২০.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, যা জলবদ্ধতার পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করছে।

দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানে ২০০ মিলিমিটার বা তারও বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রবল বর্ষণের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে, সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আগামী দু’দিন কলকাতা-সহ সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দফায় দফায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি হয়েছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে রবিবারের মধ্যে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে।

উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টির দাপট কম নয়। জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে দার্জিলিং, মালদা ও দুই দিনাজপুরের একাধিক অঞ্চলেও বৃষ্টির দাপট বাড়তে পারে। ফলে রাজ্যজুড়ে বর্ষার সক্রিয়তা জনজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তীসগড়, কেরল, গুজরাট, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, মণিপুরসহ একাধিক রাজ্যে প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। অরুণাচল প্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্য যে কোনো মুহূর্তে ভারী বর্ষণের কবলে পড়তে পারে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দাদেরও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাব্য প্রভাব কমানো যায়।

আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, মৌসুমী বায়ু বর্তমানে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এটি আরব সাগর, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড় ও ওড়িশার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করেছে, পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডেও মৌসুমী অক্ষরেখার বিস্তার ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর একটি সক্রিয় নিম্নচাপ অবস্থান করছে, যা ক্রমশ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর ফলে প্রবল ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রবেশ ঘটছে, যার প্রভাব রাজ্যের আবহাওয়ার ওপর কিছুটা অনুভূত হতে পারে। ফলে রাজ্যজুড়ে আগামী কিছুদিন বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

শহর থেকে গ্রাম— সারা রাজ্যজুড়ে এখন অবিরাম বর্ষার রূপ। কোথাও স্বস্তির পরশ, তো কোথাও জলমগ্নতার অস্বস্তি। আগামী দিনগুলোয় ছাতা, রেনকোট আর জলের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চলার জন্য তৈরি থাকতে হবে সকলকে।