সেই ভবানীপুর, দুপুরে থরহরিকম্প, রাতে জন্নাথমন্দিরের প্রসাদ বিলি !

4

দিনভর স্বরগরম ভবানীপুর। দুপুরে তুলকালাম তো রাতে প্রসাদ বিলি । সকালে পশ্চীমবঙ্গ দিবস পালন ও এক চিকিৎসকের বাড়ি যাওয়া নিয়ে বিজেপির তুলকালান। রাতে ভবানীপুরের ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি জন্নাথদেবের প্রসাদ পৌঁছে দিল তৃণমূল। গুটি সাজছে , ভোট আসছে।

শুক্রবার ভবানীপুরে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করতে যান সুকান্ত মজুমদার। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বাইকে চড়ে সেখানে পৌঁছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মাল্যদান করেন। এরপরই হরিশ মুখার্জী রোডে চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাবেন বলে স্থির করেন সুকান্ত।

কে এই রজতশুভ্র বন্দ‍্যপাধ‍্যায় ?মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় যখন লন্ডনের কেলগ কলেজে ভাষণ দিচ্ছিলেন ২৮ মার্চ , তখন যারা সেখানে তার বিরোধীতা করে ধর্না দিয়েছিলেন, স্লোগান দিয়েছিলেন, ইনি তাদেরি একজন! সেই রজতশুভ্র বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের সঙ্গেই দেখা করবেন বলে হটাৎই ঠিক করেন সুকান্ত। এর পরই সুকান্ত মজুমদারকে ঘিরে ধুন্ধুমার। চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যেতে বাধা সুকান্ত মজুমদারকে। পুলিশের বাধা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ চিকিৎসকের। সুকান্তর সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় চিকিৎসক। কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ বিজেপির। হরিশ মুখার্জি রোডে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। চিকিৎসক ও সুকান্ত মজুমদারকে আটক করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ।পরে গ্রেফতারও করা হয় । সন্ধে সাড়ে সাতটারও পরে সুকান্ত মজুমদারকে লালবাজার থেকে ছাড়া হয়। বেরিয়ে পুলিশকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমন করেন সুকান্ত! রাখ ঢাক করেন নি চিকিৎসকও। উনি ইউকের নাগরিক। ব্রিটিশ পাসপোর্ট হোল্ডার। সুকান্ত মজুমদারকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কারণে লালবাজার পৌঁছে যেতে হয়েছে তাকে। আইন বলে কোনও বিদেশি নাগরিককে এভাবে আটক করতে পারে না পুলিশ । তিনিও পুলিশের এই কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এরপর রাত ৮টা নাগাদ আসরে তৃণমূল। জগন্নাথের লীলা সমরণ করিয়ে দিতেই বোধহয় মুখ‍্যমন্ত্রীর বাতলে দেওয়া তারিখের এক রাত আগেই প্রসাদ বিতরল করতে ভবানীপুরের ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গেলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন রথের আগেই বাড়ি বাড়ি প্রসাদ বিতরণ শুরু হয়ে যাবে দীঘায় সদ্য তৈরী হওয়া জগন্নাথ মন্দিরের। বিতর্কের জল কম গড়ায় নি। মন্দির উদ্বোধনের প্রায় একমাস কেটে যাবার পরও রাজনৈতিক চাপানো উতোর চলছেই।
এর মধ্যেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের ৭০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু হয়ে গেল প্রসাদ বিতরণ। শুধুমাত্র প্রসাদ বিতরণী নয় খোদ তৃণমূল কাউন্সিলর তথা কলকাতা পৌরসভার মেয়র পরিষদ বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথোপকথন সারছেন গুজরাটি ভাষাতেই।
কলকাতা শহরের অন্যতম মিলমিশের এরিয়া ভবানীপুরের এই অংশ। কলকাতা পুরসভার ৭০ নম্বর ওয়ার্ড। গত লোকসভা ভোটের হিসাবে তৃণমূলকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছিল অবাঙালি ভোটার অধ্যুষিত এই ওয়ার্ড। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ওয়ার্ড থেকে উপনির্বাচনে জিতেছিলেন। তবু রিস্ক নিতে নারাজ।জনসংযোগ এ খামতি নেই একটুও। ভোট বড় বালাই

তবে কাউন্সিলর অসীম বোস তা মানতে নারাজ।বলছেন জগন্নাথ দেবের মাহাত্ম্য প্রচার ই আসল উদ্দেশ্য।
প্রসাদ পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। বলছেন আগে দীঘা যাননি।এবার ঘুরতে যাবেন।

বিজেপির হাতে বাঙালির শ‍্যামাপ্রসাদ আর তৃণমূলের হাতে জয় জগন্নাথ । ভবানীপুরের অবাঙালি ৭০ নম্বরে দিনের শেষে মন্দিরের প্রসাদ দিল তৃণমূল । আর বিজেপি দিয়ে গেল মাল‍্যদান আর থরহরিকম্প! দিনের শেষে অবাঙালি হিন্দু ভোট ব‍্যাঙ্কের মনে ছাপ ফেলল কে?