তথ্যঋণ তপোব্রত ঘোষ,রবীন্দ্র গবেষক,২৫জুন: ১৮৮৩ সালে বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অন্যতম প্রধান শহর কারোয়ার ভ্রমণে যান রবীন্দ্রনাথ। ঘুরতে ঘুরতে একটি কোয়ার্টজাইট পাথর তুলে নেন। তারপর তাকে হৃদয়ের আকারে কেটে লিখে রাখেন মিতায়তন কবিতা—‘পাষাণ হৃদয় কেটে/ খোদিনু নিজের হাতে/ আর কি মুছিবে লেখা/ অশ্রুবারিধারাপাতে?’
এই চতুষ্পদী কবিতা-খচিত পাথরই রবীন্দ্রনাথের হাতে তৈরি প্রথম ও একমাত্র ভাস্কর্য ( Rabindra Nath Tagore)। কারোয়ারে পাথর খোদাই করে বানানো অনুপম শিল্পকৃতির নাম রাখেন ‘পাষাণহৃদয়’, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘The Heart Stone’। উপহার দেন অক্ষয় চৌধুরীকে। পরে বিভিন্ন হাত ঘুরে আপাতত তা মুম্বইয়ে। আগামিকাল নিলামে উঠতে চলেছে। রবীন্দ্রনাথের এই ভাস্কর্য পাওয়ার পর অক্ষয় চৌধুরী দিয়ে যান স্ত্রী শরৎকুমারী চৌধুরানীকে। এরপর তা কন্যা উমারানির হস্তগত হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে দম্পতির কন্যা দেবযানী পাথরটির মালিকানা পান। মৃত্যুর আগে দেবযানী তাঁর বড় ছেলে অভিজিতের স্ত্রী ইলোরার হাতে পাষাণহৃদয়ের স্বত্ব তুলে দেন। অভিজিৎবাবু কর্মসূত্রে প্রবাসী। আমেরিকার ব্লুমিংটনে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন। সেখানকারই একটি ব্যাঙ্কের লকারে প্রায় ৪৪ বছর ‘পাষাণহৃদয়’ রাখা ছিল। দু’বছর আগে দু’জন দেশে ফিরে আসেন। আর ঠিক পরের বছর,২০২৪-এর ২৬ মে, শহরের একটি আর্ট গ্যালারিতে সেই ভাস্কর্য সর্বসমক্ষে প্রদর্শিত হয়। এই তথ্য পেতে আমাদের সাহায্য করেন তপোব্রত ঘোষ, রবীন্দ্র গবেষক।
দুবছর কলকাতায় থাকার পর ‘পাষাণহৃদয়’ আপাতত মুম্বইতে। বাণিজ্যনগরীর অষ্টগুরু নিলামঘরে আগামিকাল তা প্রদর্শিত হবে। সেখানে শুধুমাত্র এই ভাস্কর্যই নয়,রাখা থাকবে ৩৫টি চিঠি। প্রতিটি রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা। প্রাপক বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক ও প্রাবন্ধিক ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সময়কাল,১৯২৭-৩৬। নিলামঘরের শর্ত মেনে এই বিরল সম্পদের দাম ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা উঠতে পারে বলে অনুমান, যিনিই হস্তগত করুন না কেন, কোনওভাবেই দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না।