ডিজিটাল ডেস্ক ২৬জুনঃ বাঙালি সংস্কৃতির মননে রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ চিরন্তন। রবীন্দ্রচর্চা অনিবার্য কারণেই ফল্গুধারার মতো বছরের পর বছর বয়ে চলেছে। আমাদের জীবনের গতানুগতিক শিক্ষক তো অনেক থাকে। কিন্তু তিনি আমাদের জীবনের প্রত্যেক পদের সব সময়ের শিক্ষক । তিনি যেমন শুধু নিজেকে চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রাখেনি তেমনি তিনি শিখিয়েছেন বাধাহীন জীবন যাপনের মন্ত্র। তাঁর প্রত্যেক কাজের মধ্যেই অনবদ্য সব কাজ আমাদের মধ্যেই চির জীবিত। সেই সমস্ত কাজই আমাদের ভাবাতে শিখিয়েছেন কিভাবে আওয়াজ তুলতে হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে । কিভাবে গর্জে উঠতে হয় যখন নিজেদের গর্বের ও সম্মানের জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । ‘স্বদেশী সমাজ’গঠনের প্রত্যয়ের অঙ্গাঙ্গি ছিল রবীন্দ্রনাথের আত্মশক্তির ব্রত। , স্বদেশীর পরিচয়ই তাঁর সাম্বলম্বনের ঐক্যবন্ধন। আত্মশক্তির ভরণপোষণেই অবধারিত সে ঐক্য। পরনির্ভরতা ত্যাগ করে নিজেদের বোধবুদ্ধি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শক্তিসামর্থ্যই স্বদেশিকতার পক্ষে অপরিহার্য। সেই শিক্ষাই আমরা পেয়েছি তাঁর কাজ থেকে (Rabindranath Tagore News) ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় কোথায় জানেন, যখন দেখি রবি ঠাকুরের অমূল্য কিছু নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ মূল্যহীন। তাঁর নিজের হাতে সৃষ্ট “পাষাণ হৃদয়” আজ চলে যাচ্ছে মুম্বই এর বেসরকারি সংস্থা অষ্টগুরুর নিলামঘরে। ১৮৮৩ সালে বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অন্যতম প্রধান শহর কারোয়ার ভ্রমণে যান রবীন্দ্রনাথ। ঘুরতে ঘুরতে একটি কোয়ার্টজাইট পাথর তুলে নেন। তারপর তাকে হৃদয়ের আকারে কেটে লিখে রাখেন মিতায়তন কবিতা—‘পাষাণ হৃদয় কেটে/ খোদিনু নিজের হাতে/ আর কি মুছিবে লেখা/ অশ্রুবারিধারাপাতে?’এই চতুষ্পদী কবিতা-খচিত পাথরই রবীন্দ্রনাথের হাতে তৈরি প্রথম ও একমাত্র ভাস্কর্য। কারোয়ারে পাথর খোদাই করে বানানো অনুপম শিল্পকৃতির নাম রাখেন ‘পাষাণহৃদয়’,ইংরেজিতে যাকে বলে ‘The Heart Stone’।
প্রত্যেক সময় আমরা দেখি রাজনীতির আঙিনায় রবীন্দ্রনাথ ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে । এমনি বাংলার রাজনীতির কারাবারিরা তাঁদের রাজনৈতিক পথ চলা শুরুই করে কবি গুরুকে দিয়ে । তাঁকে ছাড়া বাঙ্গালি রাজনীতি অসম্পূর্ণ । বাম থেকে ডান প্রতিটি বাংলার দলই তাঁকে নিয়ে রাজনীতি করতে এক পাও পিছিয়ে রাখে না। আমারা বেশ কয়েকবার দেখেছি শান্তিনিকেন নিয়েও কম রাজনীতি হয়নি। কেন্দ্র- রাজ্য দু’পক্ষই যুযুধান হয়েছে বারবার রবীন্দ্র কীর্তি নিয়ে। পাশাপাশি বাংলা বারংবার দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লেখা বই ,প্রত্যেকটি আঁকা কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে সর্বসমক্ষে । অন্যদিকে বিজেপিও বারবারই শান্তিনিকেতন থেকে বিশ্বভারতী নিয়ে কম রাজনীতি করেনি । বারংবারই আচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতি সরগরম হয়েছে। রবিঠাকুরের কারোয়ারে পাথর খোদাই করে বানানো অনুপম শিল্পকৃতি ‘পাষাণহৃদয়’,ইংরেজিতে যাকে বলে ‘The Heart Stone’ ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা নিলামে উঠেছে । বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে অষ্টগুরুর নিলামঘরে আগামিকাল প্রদর্শিত হবে। এই অমূল্য সম্পদ বাঁচানোর জন্য বা অন্য বেসরকারি সংস্থার হাতে কুক্ষিগত হওয়ার থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে কোন রা কাটেনি একটিও রাজনৈতিকদল । যেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দায়িত্বে রেখে দিয়েছেন তথ্য -সংস্কৃতি বিভাগ।
প্রশ্ন- তিনি কেন কিছু উদ্যগ নিচ্ছেন না? রাজ্য সরকার কি পারে না ! বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমূল্য নিদর্শনটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজে কিনে নিতে অক্ষম? একই রকমভাবে প্রশ্ন রয়েছে বিশ্ব ভারতীর কাছেও । রবিঠাকুরের কর্মভূমি কি তাঁকে ভুলেই গেল? যেখানে ‘পাষাণহৃদয়’এর রবীন্দ্র সৃষ্ট আজ অবহেলায় ! এনিয়ে বিশ্বভারতীর কেন কোন উদ্যগ নেই? জাতে তারা এই বাংলাতেই এই অমূল্য সম্পদটিকে বাংলাতেই রেখে দিতে পারে !