South Kolkata Inner Conflict:দক্ষিণ কলকাতার কোন্দলে ‘ভবানিপুর’ স্বপ্নই না থেকে যায় শুভেন্দুর !

11

ডিজিটাল ডেস্ক ৭ জুনঃ বাংলায় বিজেপির সংগঠন নিয়ে বরাবরই প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাংলার বিজেপি। শুধু তাই নয় বিজেপির একাধিক জেলা কমিটি থেকে শুরু করে নতুন রাজ্য সভাপতি নির্বাচন না হওয়া ঘিরে কম জলঘোলা হয়নি । সেই আবহেই ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারংবার বলেছেন হারাবেন, এই নিয়ে বারবার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । বিষয় হল সে লড়াই যখন আরমাত্র দশ মাস দূরে, তখন গোটা দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে বিজেপিতে ভাগনের ঝড়। জেলা সভাপতিরা নিজের এলাকাতেই নিজের দলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে । সক্রিয় সদস্যপদ থেকে বহু কর্মীকে বঞ্চিত রাখার অভিযোগ উঠছে বেশ কয়েকবার । জেলা কমিটি গঠনের যে ফর্মুলা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেঁধে দিয়েছেন, তা জেলা সভাপতি মানতে রাজি হচ্ছেন না বলে একাংশের দাবি। সে সবের মাঝে আবার আর এক নেতা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, মোক্ষম সময়ে মরণ কামড় দেবে!(South Kolkata Inner Conflict)

এ বারের সাংগঠনিক নির্বাচন পর্বে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় সভাপতি বদল করেনি বিজেপি। উত্তরে তমোঘ্ন ঘোষ এবং দক্ষিণে অনুপম ভট্টাচার্যকে রেখে দেওয়া হয়েছে। সভাপতি পদে তাঁদের বহাল রাখার ঘোষণা গত মার্চে করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু জুনের প্রথম সপ্তাহ কাটিয়ে ফেলেও তমোঘ্ন, অনুপমেরা নিজেদের কমিটি গড়তে পারেননি। দক্ষিণে গোদের উপরে বিষফোড়া অনবরত অশান্তি। সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য সংবর্ধনা নিতে গিয়ে নিজের এলাকা বেহালায় মার্চ মাসে আক্রান্ত হন অনুপম। সেই ঘটনার জেরে বিজেপি চার জনকে দল থেকে বরখাস্ত ও করে। কিন্তু তাতে ক্ষোভের আঁচ কমেনি। লাগাতার চলছে অভ্যন্তরীণ অশান্তি। সাম্প্রতিকতম ঘটনা কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ের উপস্থিতিতে দুপক্ষের হাতাহাতি এবং ধস্তাধস্তি। বিজেপির দক্ষিণ কলকাতার দলে যাঁরা অনুপমের শিবিরে নন, তাঁদের সক্রিয় সদস্যপদ পাওয়া অনুপম নিয়ম ভেঙে আটকে দিয়েছেন বলে দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি কর্মীদের একটি অংশের দাবি। দলের যে কর্মীরা অন্তত ৫০ জনকে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে নথিভুক্ত করাতে পারবেন, তাঁরা সক্রিয় সদস্যপদ পাবেন বলে বিজেপি নেতৃত্ব সংগঠন পর্বের শুরুতেই ঘোষণা করেছিলেন। সে মাপকাঠিতে যাঁরা সফল, তাঁদের অনেককে সক্রিয় সদস্য হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এঁদের মধ্যে কয়েক জন আবার ওই সাংগঠনিক জেলায় ওজনদার নাম। আলিপুর চত্বরের প্রভাবশালী মুখ রাকেশ সিংহ, জেলা বিজেপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি ওঙ্কারনাথ চক্রবর্তী, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু দাশগুপ্ত, বেহালা অঞ্চলের প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি দিব্যেন্দু সামন্ত, ইন্দ্রনাথ দুয়ারি-সহ বেশ কিছু নাম দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি কর্মীদের মুখে মুখে ফিরছে, যাঁদের সক্রিয় সদস্য হওয়া অনুপম এবং বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংহ আটকে রেখেছেন বলে বিজেপির একাংশের অভিযোগ। জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও রয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বুথ, মণ্ডল ও জেলা স্তরের নতুন কমিটিগুলিতে ৫০ শতাংশ সদস্য পুরনো কমিটি থেকে নিতে হবে। দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি সভাপতি অনুপম সে নির্দেশিকাও নাকি মানতে নারাজ।

অনুপম অভিযোগগুলির কোনওটিই পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারেননি। পুরনো কমিটি থেকে ৫০ শতাংশ সদস্যকে নতুন কমিটিতে জায়গা দিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, এগুলো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বাইরে কথা বলতে পারব না। আমি যা করছি, তা আমার উচ্চতর নেতৃত্ব দেখছেন। যদি নিয়ম মেনে না করে থাকি, তাহলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। অনেককে সক্রিয় সদস্য না-হতে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, দিব্যেন্দু সামন্ত আর ইন্দ্রনাথ দুয়ারি দল থেকে এখন সাসপেন্ডেড। রাকেশ, ওঙ্কারনাথ, সঞ্জুদের সক্রিয় সদস্যপদ না-পাওয়ার অভিযোগের কোনও ব্যাখ্যা অনুপম দেননি।

বৃহস্পতিবার অনুপমের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচিতে সে দিন দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলায় হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক মালবীয়। সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা। ওই কর্মসূচিতে রাকেশের দলবল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হেনস্থা করতে পারে বলে রাজ্য নেতৃত্ব আশঙ্কা করেছিলেন। তাই এক বিধায়ক রাকেশকে ফোনে সতর্কবার্তা দেন। জেলা কার্যালয় থেকে কর্মসূচি স্থানান্তরিত করা হয় চেতলা রোডের কাছে একান্ত আপন প্রেক্ষাগৃহে। রাকেশের দলবল শেষ পর্যন্ত সেখানে যায়নি। কিন্তু তাতেও অশান্তি ঠেকানো যায়নি। প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি ওঙ্কারনাথের নেতৃত্বে একদল কর্মী সেখানে হাজির হন। তাঁদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলে ধস্তাধস্তি-হাতাহাতি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁরা প্রায় সকলেই প্রেক্ষাগৃহে ঢোকেন। তাঁদেরই এক জনের কথায়, আমরা ঢুকে দেখলাম অনুপম সেখানে নেই। রাজ্য স্তরের এক নেতা তার আগে পর্যন্ত ছিলেন। আমরা ঢোকার পরে তাঁকেও আর দেখা গেল না। কিন্তু মালবীয়জি আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওঙ্কারনাথ বলেন, একমাত্র অমিত মালবীয়ই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের সব বক্তব্য মন দিয়ে শুনে পদক্ষেপ করবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন।

প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেরই একই রা আমরা ক্ষমতায় এলে সব সময় শান্তি বজায় থাকবে। যেখানে বিজেপির নিজেদের দলেই এত কোন্দল সেখানে বাংলায় বিজেপি কিভাবে দক্ষিণ কলকাতায় সামাল দেবে তা ভাবার বিষয়। সেই নিয়ে শুভেন্দুর ভবানিপুর জেতার স্বপ্ন না স্বপ্নই থেকে যায়।