ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ মে : পুলিশের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal Apology)। বীরভূমের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তাঁর ক্ষমা চাওয়ার চিঠিতে স্বীকার করেছেন, ‘‘আমার ওই মন্তব্য করা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত।’’ তবে তিনি কিছু প্রশ্নও তুলেছেন, বিশেষ করে বোলপুরের আইসির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও কীভাবে ফাঁস হল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ভাইরাল অডিও ক্লিপ-কাণ্ডে বিতর্ক ছড়াতেই শুক্রবার দুপুরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তাকে চার ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়, যা শাসকদল দুপুর ২টো ৩২ মিনিটে সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করে। এর প্রায় চল্লিশ মিনিট পরেই অনুব্রত লিখিতভাবে ক্ষমা চান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, পুলিশের সাধারণ কর্মী থেকে উচ্চপদস্থ অফিসার—সবাই রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। তাঁদের অপমান করার কথা তিনি ভাবতেই পারেন না। তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে একবার নয়, শতবার ক্ষমা চাইতে পারি। আমি নানা ধরনের ওষুধ গ্রহণ করি, যা কখনও কখনও আমার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। দিদির পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। আমি সত্যিই দুঃখিত।’’
সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি নানা রকম ওষুধ খাই। শুনেছিলাম, আমাদের এক তৃণমূল কর্মীর ছেলেকে পুলিশ মারধর করেছে। নিরীহ ছেলে। এই খবর শুনেই আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। ওই পুলিশও আমাকে খারাপ কথা বলেছে।’’ তবে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, অডিয়ো-কাণ্ডের নেপথ্যে কোনও চক্রান্ত থাকতে পারে। ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি চিঠিতে লেখেন, ‘‘আপনাদের ভাবতে হবে, তিনটি মহকুমা—বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাটে বিশাল জনসমাগম দেখে কারা আতঙ্কিত? বিজেপি কীভাবে আমার এবং বোলপুরের আইসির কথোপকথনের ফুটেজ পেল? কে তাদের দিল? এর পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র নেই তো?’’
বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ জানান, ‘‘মিস্টার অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র ২২৪ (সরকারি কাজে বাধা ও কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি), ১৩২ (সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা), ৭৫ (শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা) এবং ৩৫১ (হুমকি) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।’’
পরে দুপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে গিয়ে পুলিশ অনুব্রতকে নোটিসও দেয়। অনুব্রত বর্তমানে ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান, যার অধীনে জেলা পুলিশের চার কর্মী তাঁর নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকেন। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই চারজন পুলিশকর্মীকে তাঁর নিরাপত্তা থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন পুলিশ সুপার।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপে (যার সত্যতা আনন্দবাজার ডট কম যাচাই করেনি) শোনা যায়, ফোনালাপের সময় একজন ব্যক্তি আরেকজনকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই কথোপকথন অনুব্রত মণ্ডল এবং বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের মধ্যে হয়েছিল, যেখানে আইসি বীরভূমের তৃণমূল নেতাকে গালিগালাজ করেন। অডিও ক্লিপে আরও শোনা যায়, আইসি-র স্ত্রী এবং মায়ের নামেও অশালীন মন্তব্য করা হয়। তবে ভাইরাল হওয়া অডিয়ো নিয়ে আনন্দবাজার ডট কম অনুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, ওই কণ্ঠস্বর তাঁর নয়। তিনি আরও জানান, একবার তিনি আইসি-কে ফোন করেছিলেন, কিন্তু আইসি তাঁকে অপমান করে ফোন কেটে দিয়েছিলেন।