ডিজিটাল ডেস্ক, ২ জুন : অনুব্রত মণ্ডলের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। ওই সার্টিফিকেট জমা দিয়ে তিনি পুলিশি তলব এড়িয়েছেন, তবে এতে বেশ কিছু গলদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে (Anubrata Mondal Fake Certificate)। সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি অসুস্থ এবং পাঁচদিন ‘বেড রেস্ট’-এর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁর নির্দিষ্ট রোগ সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। এতে প্রশ্ন উঠছে তাঁর শারীরিক অবস্থার সত্যতা নিয়ে। পাশাপাশি, সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করা চিকিৎসকের পরিচয় নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে।
বীরভূমের প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই অডিওর ভিত্তিতে অনুব্রতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়, যেখানে দুটি জামিন অযোগ্য-সহ মোট চারটি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
রবিবার সকালে শান্তিনিকেতন থানায় তাঁকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হলেও তাঁর আইনজীবী বিপদতারণ ভট্টাচার্য পুলিশের কাছে একটি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা করেন। তবে অনুব্রতকে হাসপাতালে যেতে দেখা যায়নি, কিংবা কোনো চিকিৎসককে তাঁর বাড়িতে আসতেও দেখা যায়নি, ফলে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যে হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে, পুলিশ সেই হাসপাতালের দুই প্রতিনিধিকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অনুব্রতের একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে সিওপিডি ও হৃদরোগ উল্লেখযোগ্য। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্রামের পরামর্শ স্বাভাবিক হলেও ‘বেড রেস্ট’-এর কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যা বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে।
মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেছেন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক এইচ চৌধুরী, যিনি একইসঙ্গে সরকারি মহকুমা হাসপাতালের বিএমওএইচ পদেও রয়েছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের মালিক মলয় পীট, যাকে গরু পাচার মামলায় একাধিকবার তলব করেছে সিবিআই, তাঁর শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের সংযোগও তদন্তের আওতায় রয়েছে। এদিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে রাজ্যের বাইরে আছেন এবং বিষয়টি শুনেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে ফিরে এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি, তিনি বলেন যে কোন চিকিৎসক কার জন্য মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইস্যু করছেন, তা সবসময় জানা সম্ভব নয়, তবে তিনি ফেরার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিরোধীদের দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের অসুস্থতার দোহাই দিয়ে পুলিশি তলব এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। গরু পাচার মামলার তদন্ত চলাকালীন বোলপুর হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী তাঁর বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করেন। সে সময় তিনি জানান, অনুব্রতের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে এবং তাঁকে ১৪ দিনের বেড রেস্ট নেওয়ার পরামর্শ দেন।
তবে এসএসকেমের তরফে জানানো হয়েছিল, ক্রনিক সমস্যা থাকলেও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। দুই চিকিৎসকের ভিন্ন মত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী দাবি করেন যে তাঁকে বোলপুর হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু অনুব্রতের বাড়িতে চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি হাসপাতালের প্যাডও দেওয়া হয়নি, তিনি সাদা কাগজেই যাবতীয় পরামর্শ লিখেছিলেন।
ডা. অধিকারীর দাবি, অনুব্রতই তাঁকে ‘বেড রেস্ট’ লিখতে বলেছিলেন। যেহেতু তিনি বোলপুরেই থাকেন, তাই অনুব্রতর নির্দেশ অমান্য করার সাহস হয়নি। বর্তমান মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে বিতর্কের মধ্যে অনেকেই পুরনো এই ঘটনা আবার স্মরণ করছেন।