ডিজিটাল ডেস্ক ৯ জুনঃ অভিনয়, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় কাজের টোপ দিয়ে বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে তাঁদের ফ্ল্যাটে ডেকে সেক্স র্যাকেট চালাত শ্বেতা ও তার ছেলে আরিয়ান। অভিযুক্ত সেই মা শ্বেতা খান নিজের মেয়েকেও জোর করে দেহ ব্যবসায় নামাতে চেয়েছিলেন। পরে পাড়ার লোকেরা জানায় প্রথম দিকে প্রতিবাদ করে লাভ না হওয়ায় সেই নাবালিকা কিশোরী পরে নাকি আত্মহত্যা করেছিল। এবার, পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করতে না চাওয়ায় মহিলার ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাল এক যুবক ও তার মা। একটি ফ্ল্যাটে পাঁচ-ছমাস ধরে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে জানা গেছে। মাঝে দিনের পর দিন মহিলাকে খেতেও দেওয়া হতো না। মারধর করে হাত, পা এমনকী দাঁত পর্যন্ত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে সামনে এল অকথ্য নির্যাতনের এমনই এক ঘটনা। হাওড়ার বাঁকড়ায় মা ও ছেলের বিরুদ্ধে এমনই সাংঘাতিক অভিযোগ এনেছেন নাজিরগঞ্জের এক ব্যবসায়ীও । প্রশ্ন উঠেছে, অভিযুক্ত আরিয়ান কি শ্বেতার নিজের সন্তান? তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে প্রতিবেশীদের মধ্যেই। তবে শ্বেতার স্বামী নাকি বছর আটেক আগে ফুরফুরা শরিফে চলে যান। পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর(Panihati News Update)।
ঘটনার সূত্রপাত, হাওড়ার আরিয়ান খান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পানিহাটির নন্দিনি রাও নামে বছর ২৪ এর এক মহিলার আলাপ হয়। ডোমজুরের ওই ব্যক্তি তাঁকে বেশি রোজগারের সুযোগ দেখিয়ে কাজ দেবেন বলে জানান। মহিলা আগে এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে কাজ করত বলে জানা গেছে । আরিয়ানকে বিশ্বাস করে তিনি তার সাথে হাওড়ায় এসে উঠেছিলেন। পরে ঐ ডোমজুরে আরিয়ানের ফ্ল্যাটেই তাঁকে আটকে রাখা হয় বলে জানা গেছে। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে।এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন শ্বেতা ও আরিয়ান। নির্যাতিতা ওই তরুণী রবিবার বলেন, ‘আমি বিচার চাই। অভিযুক্তদের যেন কঠোর সাজা হয়। অন্য মেয়ের সাথে ওরা যাতে আর এরকম করতে না পারে।’তদন্তে নেমে ডোমজুড় থানার পুলিশ জানতে পেরেছে, দিনের পর দিন ফ্ল্যাটে আটকে রেখে বহু মেয়েকেই দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করেছিলেন হাওড়ার মা-ছেলে জুটি। এই নিয়ে রাজনীতি এখন বেশ সর গরম। বিরোধীরা তাঁদের সুর চড়াও করতে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ।
পড়শিদের দাবি, এতদিন মা-ছেলের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। যাঁরা আগে প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো মামলা করেছেন শ্বেতা। এলাকায় ‘ফুলটুসি বেগম’নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। অভিযোগ, যে ভাড়া ফ্ল্যাটে কুকীর্তি চালাতেন, গত ১৫ বছর ধরে তার ভাড়াও দেননি। দিঘা, দার্জিলিং এমনকী মুম্বইয়েও ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ‘ব্লু ফিল্ম’ তৈরির অভিযোগ উঠেছে শ্বেতা ও আরিয়ানের বিরুদ্ধে। এ দিন বাঁকড়ায় গিয়ে দেখা যায়, যে বাড়ির দোতলায় ওই ফ্ল্যাট, তার চারিদিক সিসিটিভি ক্যামেরায় মোড়া। ফ্ল্যাটে পোষা কুকুরের ভয়ে বাইরের লোক কেউ ঢুকতে পারতেন না। এখন সেই ফ্ল্যাটে তালাবন্ধ। নির্যাতিতা মহিলার পরিবারের তরফে অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ হাওড়ার ওই ফ্ল্যাটে হানা দেয়। কিন্তু তাদের কোনও খোঁজ মেলেনি। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে সন্দেহ পুলিশের। সোদপুরের ওই নির্যাতিতা কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। রবিবার তাঁর সিটি স্ক্যান হয়েছে। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। তরুণীর মামাতো ভাই বলেন,‘দিদি আগের থেকে একটু ভালো। কথাবার্তা বলছে। চোখ দুটোও অল্প করে খুলতে পারছে।’তবে আরিয়ান ও শ্বেতা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন তরুণী বাবা-মা। আতঙ্কে তাঁরা কাজে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। গোটা ঘটনাটি নিয়ে খোঁজ শুরু করেছে জাতীয় মহিলা কমিশনও।
শনিবার কোনওরকমে ডোমজুরের ওই ফ্ল্যাট থেকে পালাতে সক্ষম হন তিনি। তারপরই খড়দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার।বর্তমানে ওই মহিলা সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সূত্র মারফত জানা গেছে, অভিযুক্ত মা-ছেলের একটি প্রোডাকশন হাউস রয়েছে, নাম ‘ইশারা এন্টারটেনমেন্ট’। ২০২১ সালে তার একটি ইউটিউব চ্যানেলও খোলা হয়। তাতে মোট চার বছরে আপলোড হয়েছে মাত্র ১১টি মিউজিক ভিডিও। তা থেকেই সন্দেহ বাড়তে থাকে। সূত্র আরও বলছে, মা ও ছেলে এই প্রোডাকশন হাউসের আড়ালে চলত পর্নোগ্রাফিক চক্র। মা-ছেলে ওই এলাকায় বেশ প্রভাবশালী বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী, যে-ই তাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ জানাত, আরিয়ান থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করত। এদিকে তারা নিজেরই নানারকম অ্যান্টিসোশ্যাল কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ মিলেছে। তারা যে ফ্ল্যাটে থাকত, তারও ভাড়াও দিত না। গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে জোমজুড় থানার পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা শাকিবা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে বাইরে থেকে লোক এনে নোংরামি চলত। পুলিশ, এলাকার অল্পবয়সি ছেলেদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রেখেছিল।’স্থানীয় যুবক পান্না গাজির কথায়, ‘ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন ধরে র্যাকেট চালাত। প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আমাদের সাতজনের নামে মিথ্যা কেস দিয়ে ফাঁসিয়েছে। পুলিশ ওকে না ধরে আমাদের ধরল। পাড়ায় এমন কোন লোক নেই, যার নামে ওরা মিথ্যে মামলা দেয়নি। পুলিশ সব জেনেও চোখ বন্ধ করে ছিল।’