ডিজিটাল ডেস্ক, ১৮ জুন : মাওবাদী মুক্ত ভারতের লক্ষ্যে নিরাপত্তাবাহিনী বড় সফলতা অর্জন করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার সীমান্ত এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে তিন শীর্ষ মাওবাদী নেতা খতম হয়েছে, বুধবার সকালে এই তথ্য প্রকাশ করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ (Maoist Encounter Andhra Pradesh)। আল্লুরি সীতারামা রাজু জেলায় মাত্র ২৫ মিনিটের অভিযানে এই সাফল্য আসে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন AOBSZC-এর স্পেশাল জোনাল কমিটির সেক্রেটারি গজারলা রবি ওরফে উদয়, ইস্টার্ন বিভাগের সেক্রেটারি বরি ভেঙ্কা চৈতন্য ওরফে অরুণা এবং মাওবাদী নেত্রী অঞ্জু।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোপন সূত্রের খবর পেয়ে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী মারেদুমিল্লি জঙ্গল এলাকায় অভিযান চালায়। জানা যায়, ওই অঞ্চলে ১৬ জন মাওবাদীর একটি দল লুকিয়ে রয়েছে, যার পরই এলাকা ঘিরে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। পিছু হটার সুযোগ না পেয়ে মাওবাদীরা কোণঠাসা হয়ে নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। বাহিনীও পালটা জবাব দেয়, ফলে দীর্ঘক্ষণ দুই পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই চলে। অবশেষে তিন শীর্ষ মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়, এবং ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মৃত মাওবাদীদের মধ্যে উদয়ের বয়স ছিল ৬২ বছর। তেলেঙ্গানার এই মাওবাদী নেতা ১৯৮০-এর দশকে পিপলস ওয়ার গ্রুপে যোগ দেন এবং দেশের বহু নাশকতায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ২০০৪-০৫ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া দলের সদস্য ছিলেন তিনি। পুলিশের দাবি, উদয়ের পুরো পরিবারই মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত। এর আগে তাঁর দাদা আজাদ ও শ্যালিকা এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন, এবং তাঁর ভাই আত্মসমর্পণ করেছেন। অপরদিকে, অরুণা নামের এই মাওবাদী নেত্রী ২৫ বছর আগে মাওবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা চালাপতির স্ত্রী, যাকে ২০১৫ সালে নিকেশ করা হয়েছিল।
২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বার্তা দিয়েছেন। এরপর থেকেই ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডসহ মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে মাওবিরোধী অভিযান ব্যাপকভাবে তীব্র হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ছত্তিশগড়-তেলেঙ্গানা সীমান্তবর্তী কারেগুট্টা পাহাড়ি অঞ্চল মাওবাদীদের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই এলাকা থেকে মাওবাদী কার্যকলাপ নির্মূল করতে প্রায় ৩ হাজার আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অভিযানে নিরাপত্তাবাহিনীর তৎপরতা আরও বেড়েছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অংশেও মাওবিরোধী অভিযান লাগাতার চালানো হচ্ছে, যার ফলে সাম্প্রতিক অভিযানে বড় সফলতা অর্জিত হয়েছে। প্রশাসন এখন পরিস্থিতির উপর কঠোর নজর রাখছে।