Donald Tramp News: ভারত ‘মৃত অর্থনীতির দেশ’ ট্রাম্পে উত্তাল রাজনীতি,অক্সিজেনে বিরোধীরা?

101

ডিজিটাল ডেস্ক ১লা অগাস্টঃ ট্রাম্পের ভারতের উপর চাপানো ২৫ শতাংশ শুল্ক, লাগু হচ্ছে থেকেই। তারই মধ্যে ভারতকে ‘ডেড ইকোনমি’ বা ‘মৃত অর্থনীতি’ বলে দেগে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে সারা দুনিয়া ট্রাম্পের এই শুল্ক জ্বরে কাঁপছে সেখানে হটাৎই মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের পণ্যের উপর ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নেবে আমেরিকা। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কের কথা ঢাকাকে বলা হয়েছিল। তা ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর আগেই পাক প্রীতি দেখিয়ে আগেভাগেই পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি সেরে ফেলেছে ট্রাম্প। যেখানে গোটা বিশ্বকে আমেরিকাকে ভারতের ‘বন্ধু দেশ’ বলেই পরিচিত করিয়ে ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী । সেই মুহূর্তেই ভারতের প্রতি এহেন আচরণ কেন আমেরিকার(Donald Tramp News) প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের। এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরেই ট্রাম্প সহ প্যাহেলগাম ইস্যুতে উত্তাল সংসদ। কার্যত তাঁতেই কি ঘি ঢালল ট্রাম্প?

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের বাইরে রাহুল বলেন,‘উনি (ডন) তো ঠিকই বলেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ছাড়া সকলেই জানেন যে, ভারতের অর্থনীতি মৃত। বিদেশমন্ত্রী বলছেন, আমাদের ফরেন পলিসি অসাধারণ। অথচ এক দিকে আমেরিকা যা খুশি তাই করছে, অন্যদিকে চিন পিছনে পড়ে রয়েছে। তার উপরে (পহেলগামে হামলা ও অপারেশ সিঁদুর নিয়ে) বিদেশে ডেলিগেশন টিম পাঠালেও কোনও দেশ পাকিস্তানের নিন্দে করেনি। এরা তো দেশ চালাতেই জানে না।’ বিজেপি–নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ও বিদেশনীতিকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ তুলে তাঁর সংযোজন, ‘প্রধানমন্ত্রী শুধু একজনের জন্য কাজ করেন — বিলিয়নেয়ার গৌতম আদানি। সমস্ত ছোট ব্যবসা ধুয়েমুছে সাফ।’ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘মার্কিন শুল্ক ঘোষণার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছাতি ৫৬ ইঞ্চি থেকে কমে ৩৬ ইঞ্চি হয়ে গিয়েছে!’

অবশ্য কংগ্রেসের ভিতর থেকেও বিরুদ্ধ স্বর উঠে এসেছে এনিয়ে । কিন্তু বিজেপি–ও এ দিন তেমন জোরালো কোনও পাল্টা যুক্তি দেয়নি। নীরব থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যা বিরোধীদের আরও সুর চড়াতে সাহায্য করেছে। তবে রাহুলের বক্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ জানিয়ে বিজেপি–সাংসদ প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল বলেন, ‘কেন্দ্র নিশ্চয়ই বিষয়টা বিবেচনা করবে। তারা কী করে, সে জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, এটা (ডনের শুল্ক) দুর্ভাগ্যজনক।’

সোমবার শুরু হওয়া জল্পনায় সিলমোহর দিয়ে বুধবার রাতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, ভারতের উপরে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও পেনাল্টি চাপানো হচ্ছে। এ বাদে ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি তেল–চুক্তি সই এবং ওই ‘ডেড ইকোনমি’ মন্তব্য করেন। এর প্রেক্ষিতে এ দিন ভারতীয় সময় বিকেল চারটের পরে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল সংসদে ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হবে’ বলে জানান। কিন্তু তাতে বিশেষ সুবিধে হয়নি। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী শুল্ক নিয়ে ভারত সরকারের তরফে কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু সময় নষ্ট করেছেন ৷ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধান কী ভাবে হবে, তা নিয়েও দিশা দেখাতে পারেননি ৷’ তা ছাড়া, লোকসভা ও রাজ্যসভা, দু’কক্ষেই ওয়েলে নেমে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদদের বড় অংশ ৷ ‘সার’-এর সঙ্গেই তাঁদের গলায় উঠে আসে আমেরিকার শুল্ক–প্রসঙ্গ ৷ চলতি বাদল অধিবেশনে এ নিয়ে বিরোধীরা আরও সুর চড়াবেন।

বিরোধীদের বক্তব্য, আর ট্রাম্প শুল্ক চাপানোয় তাঁদের অস্ত্র জুগিয়েছেন কার্যত মোদী নিজেই। বারংবার তাঁকে ‘বন্ধু’ বলেছেন, আমেরিকায় গিয়ে ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিয়েছেন নমো। এমনকী, ২০২১–২০২৪ পর্যন্ত শুধু আমেরিকায় তাঁর চারবারের সফরে সরকারি তহবিলের ৭৪.৪৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে চলতি অধিবেশনেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে জয়রামের কটাক্ষ, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মৈত্রী যে শুধুই ফাঁকা দাবি, তা ফের প্রমাণিত৷’ কংগ্রেসও নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে এ নিয়ে পোস্ট করেছে।

মিম–সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির বক্তব্য, ‘আমাদের দেশের সরকারকে হোয়াইট হাউসের এক অদ্ভুত চরিত্রের চিফ কটাক্ষ করছেন, এটা খুবই দুঃখজনক। ট্রাম্পের পদক্ষেপ আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতির উপরে হামলা ছাড়া কিচ্ছু নয়।’ আপ–এমপি সঞ্জয় সিংয়ের অভিযোগ, এ ভাবে মোদীর দৌলতে প্রতিদিন অসম্মানিত হচ্ছে দেশ। তাঁর দাবি, অবিলম্বে এ নিয়ে মুখ খুলুন মোদী। এক পা এগিয়ে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে তীক্ষ্ণ আক্রমণ শানিয়ে ট্রাম্পের ট্যারিফের নেপথ্যে ‘আমেরিকা–চিন–পাকিস্তান’ অক্ষশক্তি কাজ করছে কি না, সে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।

ডন তো শুধু শুল্ক চাপিয়ে স্তব্ধ থাকেননি, তিনি ফের ভারত–পাকিস্তান সংঘর্ষ–বিরতি থামানোর দাবিও করেছেন। এ দিন ট্যারিফ প্রসঙ্গে মোদীকে বিঁধে ডনের বারংবার এই দাবি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস–সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সরব সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অখিলেশ যাদবও।

যদিও কংগ্রেসেরই শশী থারুর বা রাজীব শুক্লার মতো সাংসদ এ ক্ষেত্রে আমেরিকা–বিরোধিতার পথ ধরেছেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তাঁরা ভারত–মার্কিন বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।