ডিজিটাল ডেস্ক ২২জুনঃ শ্রীনগরের জুবেইদার একমাত্র ছেলে তেহরানে মেডিক্যাল পড়ে। ছেলের অপেক্ষায় বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, হাতে ছেলের ছবি। বললেন, “সঙ্কটের সময় ছেলের সঙ্গে দু একবারই কথা হয়েছিল। আমি যাতে ভয় না পাই তাই ও নিজেকে শক্ত করে রেখেছিল। কিন্তু ওর আতঙ্কেই দিন কেটেছে।”চোখে-মুখে আতঙ্ক, এক হাতে জাতীয় পতাকা । শনিবার রাতের বিমানে ইরান থেকে দেশে ফিরলেন ২৫৬ জন ভারতীয় পড়ুয়া। ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দিন-রাত আতঙ্কে ছিলেন তাঁরা। কেউ বললেন, “রাস্তায় পড়ে থাকা দেহ দেখেছি।”কেউ বললেন, “বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যেত প্রতিদিন (Indian Return From Iran)।”
একজন পড়ুয়া মিজবান জানান, “তেহরান থেকে পালিয়ে কোম, সেখান থেকে মাশহাদে গিয়েছিলাম। তারপরই দেশে ফেরার বিমান পেয়েছি। এখন নিরাপদে দেশে, এটা বড় স্বস্তি। কিন্তু আবার ফিরতে হলে অনেক ভাবনা-চিন্তা করতে হবে।” ইরানে আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে কেন্দ্র সরকার চালু করেছে ‘অপারেশন সিন্ধু’। এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত ইরান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে ১০০০-র বেশি ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই কাশ্মীরের ছাত্রছাত্রী। এক ছাত্র জুনেইদ জানান, “আমার বোন মাঝেমধ্যে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করত। নেট বন্ধ ছিল, ঠিকমতো যোগাযোগই রাখা যাচ্ছিল না। বোনের কলেজের পাশেই বোমা পড়েছিল। খুব ভয় করছিল।”
তেহরানে পড়া আর এক ছাত্রী বলেন, “এক রাতেই তেহরান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। সত্যিই মনে হয়েছিল, মৃত্যু আর বেশি দূরে নেই। কিন্তু ভারত সরকার প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের পাশে ছিল।” যুদ্ধ শুরু হতেই প্রথমে পড়ুয়াদের সরানো হয় তেহরান থেকে ১৫০ কিমি দূরের কোম শহরে। সেখান থেকে তাঁরা যান মাশহাদে। তারপর সেখান থেকেই বিমানে ওঠেন দিল্লির উদ্দেশে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইরান ভারতের জন্য আকাশপথ খুলে দেয়, যা ছিল এক বড় মানবিক সিদ্ধান্ত। তেহরানে ভারতের ডেপুটি চিফ অব মিশন মহম্মদ জাওয়াদ হোসেনি জানান, “নিজেদের সংকটের মধ্যেও ইরান ভারতীয়দের উদ্ধারকাজে সাহায্য করেছে। এটা অসাধারণ সদিচ্ছার প্রমাণ।”
এই উদ্ধারকাজে শুধুমাত্র পড়ুয়ারাই নয়, ইরানে থাকা তীর্থযাত্রীরাও দেশে ফিরেছেন। জম্মু-কাশ্মীর স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। যাঁরা পড়াশোনার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। অনেকেই জানাচ্ছেন, পড়া শেষ না করে দেশে ফেরা কষ্টের হলেও, জীবন নিয়ে ফিরতে পেরেছেন সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এক অভিভাবক বললেন, “ছেলের স্বপ্ন ডাক্তারের, কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন যুদ্ধের মধ্যে শেষ না হয়ে যায়। ফের যাবে কিনা, সময় বলবে।”